নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১০ জানুয়ারি সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। সেখানে ২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি এমবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা।
হাইকোর্টের এ আদেশের ফলে অনুষ্ঠেয় এ ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।’ দেশের সরকারি-বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজে এমবিএস ও বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ২০১৫ সালে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের পর আট বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরই ২ শতাংশ কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল চলতি বছর যে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে সেখানেও ২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারের দৃষ্টিগোচর হলে প্রথমে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন যাতে সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং ২০০৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত নির্দশনা অনুসরণ করে মেডিক্যাল ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় সে বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা জারি করতে। তাঁর আবেদনের পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১৯ জুন,২০২৩ এবং ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। চিঠি দেওয়ার পর প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এমবিবিএস ও বিডিএসি কোর্সের ভর্তি নীতিমালা এবং ভর্তি বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসরণ করা হয়নি বলে জানান অহিদুল। এর মধ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর,২০২৩ ‘মেডিক্যাল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৪’ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল।
এ নীতিমালা প্রকাশের পর পরই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদের চিঠি দেন রিট আবেদনকারী অহিদুল ইসলাম তুষার। চিঠিতে চলতি শিক্ষাবর্ষ ২০২৩-২০২৪ থেকে আপীল বিভাগের রায় অনুসরণ করে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় তাতে আগের মতই ২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়। এরপর নীতিমালা এবং ভর্তি বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে গত ৩১জানুয়ারি ২০২৪ খ্রি. হাইকোর্টে রিট করেন মি. অহিদুল এবং এ বিষয়ে শুনানির পর রুলসহ আদেশ দিলেন উচ্চ আদালত।
একই সাথে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ না করে গত ২৮ ডিসেম্বর,২০২৩ নীতিমালা প্রকাশ এবং গত ১০ জানুয়ারি,২০২৪ খ্রি. প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে নীতিমালা এবং ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক স্বাস্থ্য শিক্ষা,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রায়ের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রিট কারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার বলেন এ রায় আমার জন্য অনেক আনন্দের ব্যাপার কারণ মেডিকেল /ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ৫% মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছি।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে যখন দাপ্তরিক ভাবে অনুসরণ করাতে ব্যর্থ হলাম তখনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে মহামান্য হাইকোর্টে স্মরণাপন্ন হয়েছি।এবং মহামান্য হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট এতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও আমরা অধিকার ফিরে পেয়েছি। তবে মি. অহিদুল দুঃখ প্রকাশ করে বলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় অথচ আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যেতে হয় হাইকোর্ট।