চিকিৎসা, সেবা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীর সম্পর্ক হচ্ছে অন্যতম প্রধান বিষয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-তে দিবসটি পরিচিতি পায় ৩০ মার্চ ১৯৩৩ সালে। সেই অনুষ্ঠানেই প্রথম দিবসের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীর সম্পর্কের ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ (সিনিয়র) ৩০ অক্টোবর ১৯৯০ সালে ৩০ মার্চকে জাতীয় চিকিৎসক দিবস পালনের জন্য আইন পাশ করেন। ভারতে এই দিনটি ১ জুলাই তারিখে কিংবদন্তী চিকিৎসক ও পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের (১ জুলাই, ১৮৮২ – ১ জুলাই, ১৯৬২) সম্মানার্থে পালন করা হয়।
জাতীয় চিকিৎসক দিবস নিয়ে চিকিৎসক রোগীর সম্পর্ক সহ নানা বিষয় নিয়ে লিখেছেন আজগর আলী হাসপাতালের -রেসপিরেটরী মেডিসিন কনসালটেন্ট এবং মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা: রাজীব কুমার সাহা।
চিকিৎসক হিসেবে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা থাকে যা কি না রোগীদের সাথে আলোচনা করা যায় না। অন্যভাবে বললে যারা রোগী হিসেবে চিকিৎসক এর নিকট যান তাদের কিছু বিষয় জানা উচিৎ। হয়তো এই আলোচনার মাধ্যমে রোগী এবং চিকিৎসক এর সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হবে।
প্রথমত, বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দেয়া পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে কঠিন একটি কাজ। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা পুরোপুরি সরকারি নয় আবার পুরোপুরি বেসরকারিও নয়। আবার দেখা যায় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কিছু কিছু সেবা তাকে বেসরকারি জায়গা থেকে নেয়া লাগছে। যেমন বিভিন্ন ধরনের Biopsy এবং Histopathology, কিছু কিছু জায়গায় CT Scan, MRI, আবার কিছু কিছু রক্ত পরীক্ষা আছে যেগুলো বাংলাদেশের হাতে গুনে কিছু জায়গায় হয়। তাই কতটুকু বেসরকারি ভাবে করতে হবে সে ব্যাপারে রোগী পক্ষের ধারনা নাও থাকতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে রোগী পক্ষের পরিচিত কেউ যদি হাসপাতালে না থাকে তাহলে চিকিৎসক দের ব্যাপারে এক ধরনের ভুল ধারনা তৈরী হতে পারে। দ্বিতীয়ত এক এক চিকিৎসক এর চিকিৎসা করার পদ্ধতি এক এক রকমের। কিন্তু সবার উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই আর তা হলো রোগীকে সুস্থ করা। তরুন আর প্রবীণ কোন চিকিৎসকই চায়না যে তার রোগী সুস্থ না হোক। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে, রোগী যদি চিকিৎসক সবচেয়েও বড় শত্রুও হয় তাও সেই চিকিৎসক চাইবে চিকিৎসা দিয়ে সেই রোগীকে ভালো করতে। এই মন মানসিকতা না নিয়ে কেউ চিকিৎসক হতে পারে না। এখন অনেক পরিস্থিতি এবং সীমাবদ্ধতার কারনে অনেক সময় রোগীরা আশানুরূপ চিকিৎসা পান না, এটা আমি স্বীকার করি। কারন এটা বাস্তবতা। তাই বলে রোগী পক্ষকে বলবো চিকিৎসকদের বিপক্ষ মনে করবেন না। চিকিৎসক সব সময়ই আপানাদের পক্ষে। চিকিৎসকদের নিজের পক্ষে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। দেখবেন অনেক সমস্যার সমাধান অনেক সহজেই হয়ে গেছে। কিছু হলেই ভুল চিকিৎসা – ভুল চিকিৎসা বলে চিৎকার করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। চিকিৎসকদের একটা ব্যাপারে সবার অভিযোগ আর হলো চিকিৎসকদের ব্যাবহার। কথা আংশিক সত্য, অনেক চিকিৎসকদের ব্যাবহার আশানুরূপ নয়। এক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে রোগীদের সাথে যতটুকু মমতা দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব সেটুকু করার। এক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা গ্রহীতাদেরও আরো সচেতন হতে হবে। যেমন ধরুন, চিকিৎসক দের চেম্বারে গিয়ে আপনি মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন। আপনার ফোনে কল আসছে, আপনি ফোনে কথা বলছেন। আবার চিকিৎসক দের কাছে রোগের কথা না বলে অনেক অনেক কথা বলে চলেছেন। এতে করে চিকিৎসক রোগীদের সম্পর্কে একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরী হয়। এতে করে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়ে থাকে। আবশেষে বলতে চাই, চিকিৎসা সেবা একটা পেশা। এই পেশার সাথে জড়িত দের আরো পেশাদারিত্ব দেখালে এবং রোগীরা আরো দায়িত্বশীল আচরণ করলে চিকিৎসক আর রোগীর সম্পর্কের অনেক উন্নতি হবে। এতে করে স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়বে। সবার জন্য আস্থার জায়গা তৈরি হবে।। সবাইকে চিকিৎসক দিবসের শুভেচ্ছা।
ডা: রাজীব কুমার সাহা
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট –রেসপিরেটরী মেডিসিন আজগর আলী হাসপাতাল