নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে ১৩২ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। গতকাল সূচকটি কিছুটা বাড়লেও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার কারণে এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমে আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বাড়লেও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতপার্থকের কারণে বাজারে ছন্দপতন হয়েছে। তার ওপর ডিসেম্বর ক্লোজিংকে সামনে রেখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তাও কমে গেছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে গেছে। এতে কয়েক দিন ধরে হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে দৈনিক লেনদেন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয় এবং ৩৪ মিনিট পরে সূচকে ৫৬ যোগ হয়। শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে এর পর থেকে পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। শেষ পর্যন্ত দিনশেষে প্রায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৭৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স, যা এর আগের কার্যদিবসে ছিল ৬ হাজার ৭৩৭ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও যমুনা ব্যাংকের শেয়ার।
ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে প্রায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৪৩৩ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ২ হাজার ৫৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৫২৯ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৫২ কোটি টাকা। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৮০৭ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৮টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ১৭৬টির, কমেছে ১৪৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৫টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বিবিধ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ দখলে নিয়েছে ব্যাংক খাত। ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা সাধারণ বীমা খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের দখলে ছিল ৭ দশমিক ২২ শতাংশ। গতকাল পাট খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। ঋণাত্মক রিটার্নের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, আইএফআইসি ব্যাংক, জিএসপি ফাইন্যান্স, সাইফ পাওয়ারটেক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, সোনালী পেপার, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও ফার্মা এইডস।
সমাপনী দরের ভিত্তিতে গতকাল ডিএসইতে দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ সিকিউরিটিজ ছিল ফাইন ফুডস, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ, হাক্কানী পাল্প, মুন্নু এগ্রো, ন্যাশনাল টি, দেশ গার্মেন্টস, অ্যাপেক্স ফুডস, এএমসিএল (প্রাণ), বিএসসি ও ওয়াটা কেমিক্যাল।
অন্যদিকে গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর কমার শীর্ষে থাকা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে হাওয়েল টেক্সটাইল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, আরএসআরএম স্টিল ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্স।
সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৮২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩০২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৭টির, কমেছে ১০৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৯টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৪৪ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৯১ কোটি টাকা।
বিএসডি/ এলএল