নিজস্ব প্রতিবেদক
সুকৌশলে পর্দার আড়াল থেকে সবকিছুর জোগান দিচ্ছে জামায়াত। বলা যায়, জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বিএনপির নামে নামসর্বস্ব কয়েকটি সংগঠনকে দীর্ঘদিন ধরে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ২০০৯ সালের পর থেকেই এ ধরনের সংগঠনের উত্থান ঘটে। সেই সময় আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকবলও সরবরাহ করে দলটি। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এসব সংগঠনের দৌরাত্ম্য কমতে শুরু করে। আর করোনা মহামারি শুরুর পর তাদের কোনো কর্মকাণ্ড এখন প্রকাশ্যে দেখা যায় না। তবে জামায়াত সমর্থিত সংগঠনগুলো পর্দার আড়ালে এখনো নানাভাবে সক্রিয়।
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ নানা নামে গড়ে ওঠা এসব সংগঠনের দৌরাত্ম্য কমলেও এ নিয়ে সতর্ক বিএনপি। কয়েকটি সংগঠনের নাম উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও বিভিন্ন সময়ে জানানো হয়েছে। নেতাকর্মীদের ওইসব সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতেও বলা হয়। এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ না নিতে নেতাদের বারবার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু বিএনপির কিছু নেতা দলীয় কর্মসূচির চেয়ে এসব অনুষ্ঠানে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই বারবার নির্দেশের পরও তাদের আটকানো সম্ভব হয়নি। ওইসব নেতার দাবি, বর্তমান সরকার মাঠের রাজনীতিকে সীমিত করে দিয়েছে। দলীয় কোনো কর্মসূচি পালনে নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাই এসব সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করা যায়। বলতে গেলে, এ ধরনের বিতর্কিত সংগঠনগুলোই এখন সরকারবিরোধী প্ল্যাটফরমে বিশেষ ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১০ সালের মার্চে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই বছর জুলাইয়ে আটক করা হয় জামায়াতের শীর্ষ নেতা কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। সেই সময় জামায়াত যেন প্রকাশ্যে বিচারকার্যের বিরোধিতা না করতে পারে, সেজন্য কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। রাজপথে জামায়াতকে কর্মসূচি পালন করতে বাধা দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী অবস্থান তৈরি করতে কৌশলের আশ্রয় নেয় দলটি।
বিএনপির সমর্থনে নানা সংগঠনের উত্থান ঘটায়। আগে যেসব ভুঁইফোড় সংগঠন নিষ্ক্রিয় ছিল, তাদের সক্রিয় করা হয়। ওই সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রায় প্রতিদিনই এসব সংগঠনের ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালন করা হতো।
এসব অনুষ্ঠানে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকতেন। শুধু তা-ই নয়, বিএনপিতে জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদেরও অতিথি করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নানা বক্তব্য দিতেন জামায়াত নেতারা।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এসব সংগঠনের তৎপরতা ছিল। কিন্তু ওই বছর জাতীয় নির্বাচনের পর জামায়াত এসব সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসে। ফলে আর্থিক সংকটে অনেক সংগঠনই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা না বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দলে ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এর বাইরে দলের নাম ব্যবহার করে অনেক সংগঠন গড়ে উঠেছে। কিন্তু বাস্তবে এসব সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
তাদের কর্মকাণ্ডে অনেক সময় দল ও সংগঠনকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়। তাই নেতাকর্মীদের এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠন সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই সতর্ক থাকলে তারা সুবিধা করতে পারবে না।
বিএসডি/এমএম