গত কয়েক বছরে বেড়েছে আত্মহত্যা। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গেছে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা। খোদ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে উঠে এসেছে এমন চিত্র। দেখা গেছে, শুধু বয়স্ক নারী-পুরুষ নয়, অল্পবয়সী এমনকি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ অতিমাত্রায় হতাশাগ্রস্ত ও সংবেদনশীল হয়ে পড়ায় আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সব বয়সী মানুষের মধ্যেই বেড়েছে এর প্রবণতা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা আরও বেশি। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সুবিধা- অসুবিধা এবং আত্মহত্যার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন দৈনিক বর্তমান সময়ের জবি প্রতিনিধি শ্রেয়সী সিকদার।
“আত্মহত্যার পরিবর্তে ভ্রমণকে বেছে নিন”নাফিসা তাবাসসুম, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ
মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড ডালবার্গ একবার বলেছিলেন, “যখন কেউ উপলব্ধি করে যে, তার জীবনের কোনো মূল্য নেই, তখন সে আত্মহত্যা করে নতুবা ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়ে।” প্রথম কথা হচ্ছে, কোনো মানুষের জীবনই মূল্যহীন বা অর্থহীন হতে পারে না। কেউ যদি তা মনে করেন ই, তাহলে আত্মহত্যার পরিবর্তনে ভ্রমণকে বেছে নিন।
“বাঁচতে শিখুন, বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কোনো সাহসিকতা নেই”‘অন্তরা রায় বৃষ্টি, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মানসিক শক্তি হলো আত্মহত্যা প্রতিরোধের একটা বড় অস্ত্রমেহজাবীন হোসেন মেধা, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ
বেশির ভাগ মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়,তারা আসলে নিজেদের মারতে চায় না, তারা কেবল তাদের মানসিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি চায় – যেই মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে তারা যাচ্ছে সেটার অবসান হোক।একজন সুইসাইডাল ব্যক্তির মধ্যে প্রথম যে সাইনটি দেখা যাবে সেটা হলো ডিপ্রেশন,তারপর নিজেকে আইসোলেটেড করে ফেলা।সবশেষে আত্মহনন বিষয়টিকে নিজের ভেতর আইডিওলাইজ করতে শুরু করা।
“নিজের সাথে নিজের করা যুদ্ধে হেরে যাওয়া যাবেনা”নিথরা মেহরাব,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
” জীবনকে ভালবাসতে হবে”নুসাইবা তাছনিম,ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ
তবে এর সমাধান আমাদের হাতেই। আমরা যদি একটু সচেতন হই, আশে পাশের মানুষদের হতাশার কথা শুনে তাদের অসুবিধা গুলোকে গুরুত্ব দিই, তাদের একটু সময় দিই তাহলে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অনেকে মনে করেন আত্মহত্যা নিয়ে কথা বললে হয়ত আত্মহত্যার পরিমান বেড়ে যাবে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুকে অভয় দেওয়া হয়, পরিবার পাশে থেকে সর্বদা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আত্মহত্যার মত মানসিক ব্যধি থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। টিনএজারদের বুঝাতে হবে জীবনের মর্ম, ” সফল ব্যক্তিদের জীবনেও ছিল বিভিন্ন ঝড়-ঝঞ্ঝা ” এ সম্পর্কে জানাতে হবে।
ধর্মীয় অনুশাসন এবং জ্ঞানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আত্মহত্যা মুক্তির পথ নয়। জীবনকে ব্যর্থ করা কঠিন। সময় নিয়ে জীবনকে ভালোবাসলে সব কিছু অর্জন সম্ভব।
১ মন্তব্য
মানসিক শক্তি আত্মহত্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু যখন একজন মানুষ হতাশায় ভোগে তখন তার প্রয়োজন মানসিক শক্তি প্রদান করার মতো একজন মানুষ। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হয় না। বরং সে যখন এসব নিয়ে ফেইসবুকে কিছু লেখে বা কাউকে কিছু বলে আশে পাশের মানুষগুলো সেটাকে নিয়ে মজা করে। এতে করে তার হতাশা কমে না আরো বেড়ে যায়। একজন আত্মহত্যা করার পরে তাকে নিয়ে সবাই খুব কথা বলে, ফেইসবুকে পোস্ট দেয়। অথচ বেচেঁ থাকতে তার কথা গুলো শোনার মতো সময় কারো থাকে না। মানুষ সব থেকে নিজেকে বেশী ভালোবাসে আর খুব সহজে বা খুব কম কষ্টে নিজের জীবনটা ত্যাগ করতে পারে না।
সবার আগে আমাদের উচিত পাশের মানুষটার কথা শোনা। তাকে মানসিক শক্তি প্রদান করে তাহলে হয়তো আত্মহত্যার হার কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।