দেশীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় আদা-রসুনের চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকার কারণে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এই দুটি পণ্যের বাজার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে চীন। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে চীনের রসুনের আমদানি কিছুটা থাকলেও আদার আমদানি একদেদম শুন্যের কৌঠায়। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত আদা ও রসুনের সংকট রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
গতকাল মঙ্গলবার দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, আড়তে চীনের রসুনের যোগান কিছুটা থাকলেও চীনা ও দেশি আদার যোগান একদম শুন্যের কৌঠায়। এ অবস্থায় বর্তমানে আদার যোগান মেটাচ্ছে ভারতের কেরালা, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমারের আদার আমদানিকারকরা।
পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি ইন্দোনেশিয়ার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা, ভারতের কেরালার আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। অথচ গত বছর এদিনে আমদানি আদা বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৭০ শতাংশের বেশি।
তাছাড়া দেশি এক কোষাযুক্ত রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার বেশি। আর পাইকারিতে আমদানি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত। গত কয়েকদিনের তুলনায় কিছুটা কমলেও গত বছর এদিনের তুলনায় বেশ বাড়তি। গতবছর এদিনে রসুন বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৫৬ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে খুচরা পর্যায়ে গিয়ে এ দুটি পণ্যের দাম বেড়ে ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে।
খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য মতে, গত কয়েকবছর ধরে আমদানির ঋণপত্র খুলতে গিয়ে নানা জটিলতা, ডলার মূল্য, আমদানি রেট ও পরিবহন খরচ বাড়তির কারণে আদা ও রসুনের দাম বাড়তি। তাছাড়া দেশীয় পর্যায়ে এ দুইটি পণ্য উৎপাদনের ঘাটতির পাশাপাশি চীনের আদার বাজারে চড়া দামের কারণে আমদানিকারকেরা পিছিয়ে পড়ায় সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে আদার সংকট মেটাতে নির্ভর করতে হচ্ছে ভারত, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের আদার ওপর।
খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, ‘বাজারে ক্রেতার চাহিদা মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ আদা ও রসুন নেই। বর্তমান ব্যবসায়ীরা যে দরে আদা বিক্রি করছে এতে গড়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লোকসান থাকবে ব্যবসায়ীদের। তবে রসুনের বাজার এ সপ্তাহে কিছুটা কমতির দিকে হলেও যোগান সংকটের কারণে আবারও বেশ চড়া হতে পারে।’
চাক্তাই ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে দেশে আদা-রসুন আমদানি কমে এসেছে। তাছাড়া বাজারে আদার আমদানি সংকট রয়েছে। ফলে সরবরাহ সংকটে পাইকারি বাজারে পণ্য দুটির দাম বাড়তির দিকে।’
চাক্তাই আদা ও রসুনের আড়তদার ইরফানুল হক বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত আদা ও রসুনের সংকট রয়েছে। খাতুনগঞ্জের বাজারে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ ট্রাক আদা ও রসুনের প্রয়োজন। সেখানে কয়েকদিনে মিলে আসে একট্রাক আদা ও রসুন। অন্যান্য বছরের তুলনায় যথেষ্ট যোগান সংকট রয়েছে। যার ফলে আদার বাজার বেশ চড়া।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৫ মেট্রিকটন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন। আমদানি করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৫ মেট্রিকটন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন কমে হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিকটন।
গত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। চলতি বছরের জানুযারি থেকে মে পর্যন্ত আদা আমদানি করা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৩৮ মেট্রিকটন এবং রসুনের চাহিদা রয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার টন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার টন। সে হিসাবে ঘাটতি খুব বেশি নয়।
বিএসডি/এসএস