দেশব্যাপী আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘বিটিসিএল এর ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য বিটিসিএলের আইপি নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এরইমধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানী লিমিটেড (বিটিসিএল)।’
এ বিষয়ে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য শামীমা নার্গীস বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশব্যাপী আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়াসহ বর্ধিত চাহিদা পূরণে বিটিসিএলের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এ বিবেচনায় একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন আধুনিক ও উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সেবা নিশ্চিত করতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সকল জেলা এবং উপজেলা সদরে অপটিক্যাল ফাইবার ক্রাবল ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। এছাড়া দেশের ১ হাজার ২১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ বিটিসিএল অপটিক্যাল ফাইবার ক্রাবল নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে। অবশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদগুলোর অধিকাংশই আইসিটি বিভাগ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে এই অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।
দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদর এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলোর অধিকাংশই অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য বিটিসিএলের আইপি নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন সম্প্রসারণ করা হয়নি। ফলে দেশব্যাপী বিস্তৃত সরকারি অফিসগুলোর ই-নথিসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা, জরুরী প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সিং, সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ই-লানিং ইত্যাদিসহ ব্যক্তি খাতে ইন্টারনেটের উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়ায় বিটিসিএলের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ ব্যান্ডউইথ চাহিদার প্রক্ষেপণ ও সরকার ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২০-২১ সালে ৫জি চালুতে সহায়ক ভুমিকা পালনে ৫জির যথাযথ প্রস্তুতির জন্য বিটিসিএলের বিদ্যমান আইপি নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রয়োজন হয়েছে পড়েছে।
এছাড়া বিডি এবং বাংলা ডোমেইন সংক্রান্ত সেবা বিটিসিএল দিয়ে থাকে। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড প্ল্যাটফর্ম না থাকায় ডট বিডি এবং বাংলা ডোমেইন ওয়েব হোস্টটিং কালেকশন, ক্লাউড কমপুটিং ইত্যাদি সার্ভিসের জন্য উচ্চগতিসম্পন্ন নির্ভরযোগ্য সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে ইন্টারনেট সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিদ্যমান আইপি নেটওয়াকেৃ পাশাপাশি সমান ক্ষমতার একটি ব্যাকআপের ব্যবস্থা রাখা অত্যাবশ্যক। এ জন্য দেশের আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে এবং বিভিন্ন জেলায় বিদ্যমান ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জগুলোর আধুনিকায়ন সম্প্রসারণ জরুরি।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে জেলা, উপজেলা সদর এবং ইউনিয়ন পরিষদে আইপি যন্ত্রপাতি স্থাপন ও আধুনিকায়ন, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে ও জাতীয় ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জগুলোর ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, ডট বিডি বাংলা ডোমেইন, ওয়েব হোস্টিং, কালেকশন, সার্ভার, ভাচুর্য়াল মেশিন, স্ট্রেঞ্জ, আলউড কমপুটিং ইত্যাদির স্ট্যান্ডার্ড প্ল্যান্টফর্ম স্থাপন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, সম্ভাব্যতা যাচাই, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) টার্গেটগুলো বিবেচনায় নিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশের মোট ব্যান্ডউইডথ চাহিদা ১১ হাজার ৫০০জিবিপিএস প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা ছিল ১ হাজার ৬২৫ জিবিপিএস। ২০৩০ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথ এর চাহিদা নিরূপণ করে ৪৭২টি উপজেলায় ১০ গিগাবিট বা সেকেন্ড এবং এর গুণিতক ক্যাপাসিটির রাউটার ও সুইচ, ১ হাজার ২১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ১/১০ গিগাবিট বা সেকেন্ড ক্যাপাসিটির সুইচ স্থাপন কাজ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমপক্ষে ১০ জিবিএস ক্ষমতার ইন্টারনেট ব্যাকবোন তৈরি করা সম্ভব হবে।
জেলা পর্যায়ে বিদ্যমান ও বাস্তবায়নাধীন অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির পর অবশিষ্ট যে পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ চাহিদা রয়েছে তা জেলাভিত্তিক নির্ধারণ করা হযেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও যশোর, খুলনায় আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে এবং ১২টি জেলা সদরে জাতীয় ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ সম্প্রসারণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।