আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এক মাস পার হয়েছে। কাবুলে গোষ্ঠীটি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে চরম মানবিক সংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটি বলছে, আফগানদের খাদ্য ঘটাতি মেটাতে জরুরিভাবে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ প্রয়োজন। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।
জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের ৪০ লাখ মানুষ বর্তমানে খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছেন এবং সংকটপীড়িত এসব মানুষের বেশিরভাগই দেশটির গ্রামীণ এলাকায় বসাবাস করে। আর তাই আগামী মাসগুলোতে আফগান নাগরিকদের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩০৭ কোটি টাকা।
তিনি জানিয়েছেন, আগামী শীতের জন্য গম রোপণ করতে, গবাদিপশুর খাবারসহ ঝুঁকিতে থাকা পরিবার, বয়স্ক মানুষ এবং প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সহায়তা দিতে এই অর্থ প্রয়োজন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জরুরি অবস্থা এবং স্থিতিস্থপকতা বিষয়ক দফতরের ডিরেক্টর রেইন পলসেন জানান, আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশ মানুষ দেশটির গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বসবাস করেন।
তিনি বলছেন, আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ২৫টি প্রদেশের ৭৩ লাখ মানুষ প্রচন্ড খরার কারণে খাদ্য সংকটে ভুগছেন। দেশটির গ্রামীণ এলাকার এসব মানুষ করোনা মহামারির কারণেও দুর্ভোগে আছেন বলে জানান রেইন পলসেন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আফগানিস্তানের মানুষের সহায়তার জন্য জাতিসংঘ ইতোপূর্বে যে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছিল, সেটির মধ্যেই তার সংস্থার ৩৬ মিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু আফগানিস্তানে শীতকালীন কৃষি মৌসুম অত্যাসন্ন হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে এই অর্থটি এখনই চায় এফএও।
এর আগে আফগানিস্তানে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় দাতারা। তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের পর দেশটিতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টির বিষয়ে জাতিসংঘের হুঁশিয়ারির পর দাতারা এই আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। যা কার্যত জাতিসংঘের চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মনে করছে, দাতাদের দেওয়া অর্থ থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় ৩৬ মিলিয়ন ডলার পেয়ে যাবে এফএও। কিন্তু পলসেন জোর দিয়ে বলছেন, তাদের এই টাকাটি এখনই প্রয়োজন এবং ডোনারদের এই টাকাটি দ্রুত হস্তান্তর করা উচিত।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং সহায়তা প্রদানকারী গ্রুপগুলো বলছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর খাবার ও টাকার অভাবে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুতগতিতে তালেবানের ক্ষমতা দখল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থিত সরকারের পতনের পর আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা আকস্মিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। আর এতেই দেশটিতে মানবিক সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধাদের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ এবং গোটা আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আফগানদের নগদ অর্থের সংকট দেখা দেয়। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে অর্থপ্রবাহ বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের রিজার্ভ আটকে দেওয়ায় পরিস্থিতি এখন চরম আকার নিয়েছে।
আফগানিস্তানজুড়ে ব্যাংকব্যবস্থা এখনো সচল হয়নি। মধ্যবিত্তরাও অর্থ উত্তোলন করতে পারছেন না। অনেকে তুলতে পারলেও সপ্তাহে তার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার আফগানি। নতুন সরকার রিজার্ভে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। সব মিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
রেইন পলসেন বলছেন, যুদ্ধ ও সংঘর্ষের কারণে চার লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। শরণার্থীতে পরিণত হওয়া এসব মানুষের বেশিরভাগই আফগানিস্তানের গ্রামাঞ্চলের। তার দাবি, প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে।
তার মতে, আফগান কৃষকদেরকে কৃষি মাঠে রাখা এবং পশুপালকদেরকে তাদের কাজে ব্যস্ত রাখাই আফগান শরণার্থী সংকটের সমাধান সূত্র হতে পারে।
পলসেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছেন, আফগানিস্তানের কৃষি ব্যবস্থাপনাও যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে সেটি মানুষের মাঝে অপুষ্টি বৃদ্ধি করবে, বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়বে এবং একইসঙ্গে মানবিক সংকট আরও খারাপ আকার ধারণ করবে।