আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক স্বরে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন; যাতে আফগান মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার এবং তাদের শিক্ষকদের কাজে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ এই নোবেলজয়ী আফগানিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর পরিবর্তন দেশটির নারী এবং মেয়েদের ওপর কী ধরনের সর্বনাশা প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।
তালেবানের কাছে ‘স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন’ বার্তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে মালালা বলেন, ‘এটি এমন একটি গল্প, যেটি নিয়ে আমরা কাজ না করলে অনেক আফগান মেয়েকে শেয়ার করতে হতে পারে।’ নারী ও মেয়েদের অধিকার সমুন্নত রাখাই তালেবানের সঙ্গে যে কোনো কাজের পূর্বশর্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০ বছর শেষে গত মাসে কাবুলের ক্ষমতায় ফেরার পর নারীদের শিক্ষার অধিকার সীমিত করা এবং তাদের বাড়িতে থাকতে তালেবান বাধ্য করছে বলে যে খবর গণমাধ্যমে আসছে সেটি নিয়েও কথা বলেছেন। নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি বলেন, প্রত্যেক মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকারের ব্যাপারে আমি কথা বলেছি। আমি দেখেছি, একজন বন্দুকধারী আমার স্কুল বাস থামিয়ে দিয়েছেন, আমার নাম ধরে ডেকেছেন এবং আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছেন। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।
পাকিস্তানের এই নোবেলজয়ী ও মানবাধিকার কর্মী বলেন, আমি দেখেছি মাত্র তিন বছরে আমার বাসা শান্তির জায়গা থেকে কীভাবে ভয়ের রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছে।
২০১২ সালে স্কুল থেকে ফেরার পথে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় তালেবানের বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন মালালা। শান্তি-সুরক্ষা গড়ে তোলা এবং আফগান নারী ও মেয়েদের অধিকার রক্ষায় মেয়েশিক্ষাকে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মালালা বর্তমানে লাখ লাখ ডলারের একটি তহবিল গঠন করেছেন; যা সারা বিশ্বে মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে ব্যয় করা হচ্ছে।
কেন এখনই আফগান নারী এবং মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মালালা বলেন, আফগান নারীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ বেছে নেওয়ার অধিকারের দাবি তুলেছেন। কাবুলে তাদের বিক্ষোভে টিয়ার গ্যাস, রাইফেলের বাট এবং লাঠির ব্যবহার করা হয়েছে।
গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন, এমন অনেক নারী শিক্ষাবিদ ও অধিকার কর্মীর সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন মালালা।
‘তাদের প্রচেষ্টার কারণে গত বছর আফগানিস্তানের স্কুলের ৩৯ শতাংশ শিশুই ছিল মেয়ে। এখন সেই অগ্রগতি এবং মেয়েদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।’
মালালা বলেন, ‘তিনি আফগানদের কাছে থেকে শুনেছেন যে, কিছু কিছু এলাকায় মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। নারী শিক্ষক এবং ছাত্রীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি অনেক নারী শিক্ষককে স্কুল থেকে ফেরত পাঠিয়ে বলা হয়েছে, তাদের আর চাকরি নেই।’