নিজস্ব প্রতিবেদক
‘আমার দেহ, আমার সিদ্ধান্ত’—এই স্লোগানকে ব্যক্তিতান্ত্রিক উগ্রতার প্রকাশ আখ্যা দিয়েছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও লেখক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছেমতো নিজের শরীর নিয়ে যা খুশি করতে পারি না। আত্মহত্যা তো কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তাহলে এই স্লোগান আসলে সমাজ ও নৈতিকতা অস্বীকারের নামান্তর। এটা নারীর ক্ষমতায়নের নামে একটি পশ্চিমা ফর্মুলা চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত।’
বুধবার (২১মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানিক মিয়া হলে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘নারীর ন্যায্যতা ও নারী সংস্কার কমিশন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা ইচ্ছেমতো নিজের শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমার দেহ, আমার সিদ্ধান্ত স্লোগানটি শুনতে যতটা মুক্তির কথা বলে, আদতে তা সমাজবিচ্ছিন্ন এক উগ্র ব্যক্তিতান্ত্রিক চিন্তার প্রতিফলন। আমার শরীর আমার হলেও, আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারি না—কারণ আমি এই সমাজের অংশ, এই রাষ্ট্রের অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে, অশ্লীল তর্কে নয়। শালীনতা ও সামাজিক ঐক্য বজায় রেখেই আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে হবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘নারীর অধিকার আন্দোলনের নামে এখন সমকামিতা ও অবাধ যৌনতাকে লাইসেন্স দেওয়ার আয়োজন চলছে। এটা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা নিজেদের ‘প্রগ্রেসিভ’ বলেন, তারা বাস্তবে নারীর মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ।’
তিনি আরও বলেন, ‘তথাকথিত নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট জাতি প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি পশ্চিমা দাতা সংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়নের কৌশল মাত্র। আমরা এই কমিশনের পূর্ণ বাতিল চাই।’
এসময় নারীর অধিকারের নামে দেশের সামাজিক কাঠামো ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে ‘নারী সংস্কার কমিশন’কে সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবি জানালেন দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সভায় সর্বসম্মতভাবে বলা হয়, তথাকথিত নারী সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে নারীর নামে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চলছে। নারীর অধিকার হোক বাস্তব, সম্মানজনক এবং শালীনতায় ভরপুর—এই দাবি জানিয়ে বক্তারা সরকারের প্রতি কমিশনটি বাতিলের আহ্বান জানান।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া। গণশক্তি সভার সভাপতি সাংবাদিক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, মেজর (অব.) রেজাউল হান্নান শাহীন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. শামীমা তাসনীমসহ আরও অনেকে।