হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও এখনি তার বাসায় ফেরা অনিশ্চিত। চিকিৎসকরা বলছেন, “ম্যাডামের পোস্ট কোভিড যে জটিলতা ছিল, সেইগুলোর উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তার অন্যান্য রোগগুলো আগের মতোই আছে। ফলে আরও কিছুদিন তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে। আগামী কয়েক দিন তাকে পর্যবেক্ষণের পর ‘বিপদমুক্ত’ মনে হলেই হাসপাতাল থেকে ছাড় (রিলিজ) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এখন তিনি কেবিনে আছেন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়ার) পোস্ট কোভিড জটিলতার কিছুটার উন্নতি হয়েছে। এটাকে বড় ধরনের উন্নতি বলা সুযোগ নেই। তাই তাকে এখনি বিপদমুক্ত যাচ্ছে না। ফলে, আমরা তাকে আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব। মেডিকেল বোর্ডের ১০ জন চিকিৎসকের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। এখানে একজনের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
খালেদা জিয়া এখনও তরল জাতীয় খাবার খাচ্ছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক আরও বলেন, তিনি এমনিতে কম খাবার খান। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বাইরে থেকে অর্থাৎ তার আত্মীয়-স্বজনরাই খাবার নিয়ে আসেন। তারা ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার নিয়ে আসেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের বাইরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার ছাড়া অন্য কেউ তাকে দেখতে হাসপাতালে যান না। দলের নেতাদের মধ্যে মহাসচিবকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থার আপডেট জানান। তিনি পরবর্তীতে অন্যদের সেই বিষয়টি অবহিত করেন।
শনিবার (৫ জুন) দলের নিয়মিত স্থায়ী কমিটির শুরুতে ম্যাডামের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়টি নিয়ে ব্রিফ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বৈঠকে জানান- ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কথাবার্তাও স্বাভাবিকভাবে বলতে পারছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বের চন্দ্র রায় বলেন, ম্যাডামের হার্ট ও কিডনির সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকরা সেগুলোর চিকিৎসা করছেন।
খালেদা জিয়ার বাসায় ফেরাটা চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, তিনি যেহেতু ডাক্তারদের অধীনে চিকিৎসাধীন। তারা পরামর্শ দিলেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। কবে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘এই সপ্তাহে তাকে বাসা আনা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। মহাসচিবও তার বাসা ফেরা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে একজন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা বলছে, ম্যাডামকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড সার্বিক অবস্থা বিবেচনা তার সন্তুষ্টজনক মনে করলেই হাসপাতাল থেকে বাসা নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। করোনার কারণে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে ৩ মে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে গত ৩ মে তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।