নিজস্ব প্রতিবেদক
নৈতিকতা ও দক্ষতার সমন্বয়ে আত্মনির্ভরশীল প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং জাতীয় সামগ্রিক উন্নয়নে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আলিয়া মাদ্রাসায় “ব্যবসায় শিক্ষা” বিভাগ চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
রোববার (১৩ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে শিবির নেতারা বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে মুসলিম সমাজ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৭৮০ সালে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নিশ্চিত হয়নি। বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসায় মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগ চালু থাকলেও এখনো ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
শিবির নেতারা বলেন, ব্যবসায় শিক্ষা এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে শিক্ষার্থীরা অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান ও উদ্যোক্তা বিষয়ক নানামুখী দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পায়। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখা মানে তাদের সম্ভাবনাকে সংকুচিত করা। ব্যবসায় শিক্ষার মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধসমূহকে আর্থিক খাতেও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব, যা দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ ও অর্থনৈতিক অন্যায় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার ঐতিহাসিক অবদান থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত হয়নি। এবতেদায়ী থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বাজেট বরাদ্দ, পাঠ্যসূচি আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষক, প্রশিক্ষণ ও গবেষণাসহ সব ক্ষেত্রেই মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় এ বছরও মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য সম্মিলিতভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট শিক্ষা বাজেটের মাত্র ১৩ শতাংশ, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে একদিকে যুগোপযোগী আলেম ও গবেষক তৈরি হচ্ছে না, অন্যদিকে দাখিল ও আলিম পর্যায় অতিক্রম করার পর বড় একটি অংশের শিক্ষার্থী মাদ্রাসা শিক্ষা ছেড়ে অন্য ধারায় চলে যাচ্ছে বা ঝরে পড়ছে।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪০ লক্ষের অধিক আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা সঠিক দিক নির্দেশনা ও উপযুক্ত সুযোগ পেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বৈষম্য সত্ত্বেও এই শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়ন, জাতীয় সংকট নিরসনে ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছেন।
শিবির নেতারা জোর দিয়ে বলেন, জাতির সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য শিক্ষার সব ধারা, বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষার যথাযথ স্বীকৃতি, বিকাশ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মতো একটি মৌলিক ও প্রয়োজনীয় শাখাকে বাদ রেখে মাদ্রাসা শিক্ষাকে কার্যকর ও কর্মমুখী রূপ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা অবিলম্বে আলিয়া মাদ্রাসায় ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে সময় উপযোগী সংস্কারের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।