নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশালের হিজলার কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম ও তার পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে দ্রুত সময়ের ২ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর নির্মাণের কাজ শেষ করবে হিজলা উপজেলা প্রশাসন।
তবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশের পরও পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির নিশ্চয়তা পাননি তিনি। পুলিশে চাকরি করার স্বপ্ন নিয়ে দিন পাড় করছেন তিনি।
এদিকে, কিছু গণমাধ্যমের নেতিবাচক খবরে বিব্রত আসপিয়া ও তার পরিবার। পূর্ব পুরুষের উত্তরাধীকার সূত্রে এখন পর্যন্ত তারা ভোলার চরফ্যাশনে কোনো জমি ভোগ দখল কিংবা বসতি না গড়লেও কিছু গণমাধ্যমে তাদের ২ বিঘা সম্পদের খবরে উষ্মা প্রকাশ করেছেন আসপিয়া ও তার পরিবার।
বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে নিজের যোগ্যতায় ৭ স্তর উত্তীর্ণ হয়ে ৫ম স্থান অধিকার করার পরও শুধুমাত্র ভূমিহীন হওয়ায় চাকরি হচ্ছিল না হিজলা সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রী আসপিয়া ইসলামের। বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত এমন খবর দৃষ্টিগোচর হয় প্রধানমন্ত্রীর। তিনি আসপিয়াকে জমিসহ ঘর এবং যোগ্যতা বলে পুলিশে চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
সে অনুযায়ী গত শনিবার ওই উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে ২ শতাংশ খাস জমিতে আসপিয়াদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।
সোমাবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, সরকারের নির্দেশে আসপিয়ার জন্য ঘর নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। দুই শতাংশ খাস জমিতে দুটি কক্ষের মূল ঘর এবং শৌচাগার ও রান্নাঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আসপিয়ার স্থায়ী নিবাস নির্মাণের জন্য প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের আদলে ওই ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘর নির্মাণ সম্পন্ন করে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, খাস জমিতে ঘরের বন্দোবস্ত হয়ে গেলেও পুলিশ কনস্টেবলের প্রত্যাশিত পদে এখনও নিয়োগ পাননি তিনি। কবে নিয়োগ পাবেন তারও অনিশ্চিত।
মুঠোফোনে আসপিয়া ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে পত্রিকায় দেখেছেন। কিন্তু আজ বিকেল পর্যন্ত এ ধরনের কোন নিয়োগপত্র বা চিঠি পাননি তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে এ বিষয়ে কেউ চাকরির নিশ্চয়তাও দেয়নি। তবে প্রায় হাতছাড়া হওয়া চাকরিটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পাবেন বলে বিশ্বাস তার। পুলিশে চাকরির মাধ্যমে দেশের সেবা করতে চান কলেজছাত্রী আসপিয়া।
এ বিষয়ে রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী অসহায় ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিচ্ছেন। অসহায়-দুস্থ মানুষের মুখে হাঁসি ফোটানো এবং কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না বলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তহার ছিল। সেখানে ভূমিহীন হওয়ায় একটা মেয়ের চাকরি হবে না-এটা প্রধানমন্ত্রী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আসপিয়ার চাকরির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার মুখে হাঁসি ফোঁটানোর জন্য পুলিশ বিভাগ কাজ করছে। অচিরেই এর একটি সুরহা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ‘আসপিয়ার পরিবার ভোলার চরফ্যাশনে ২ বিঘা জমির মালিক’ কিছু গণমাধ্যমের এমন নেতিবাচক খবরে বিব্রত আসপিয়ার পরিবার। তার প্রয়াত বাবা কিংবা পরিবারের কোন সদস্যের নামে পূর্ব পুরুষের উত্তরাধীকার সূত্রে এক ছটাক জমিও ভোগ দখলে নেই। দাদা বাড়ি তাদের কোন বসত ঘর নেই, কখনও ছিলও না। তারপরও কিছু গণমাধ্যম তার পরিবারকে ভোলায় ২ বিধা সম্পদের মালিক উল্লেখ করায় তাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন আসপিয়া ও তার মা ঝর্না বেগম।
তিনি বলেন, তার পরিবার ৩৫ বছর ধরে হিজলায় বসবাস করছে। পরিবারের ৪ সন্তানের জন্ম, পড়ালেখা, ভোটার সবই হিজলায়। পূর্ব পুরুষের উত্তরাধীকার সূত্রে কিছু পাবেন কিনা তা জানেন না। দাদা বাড়িতে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। দাদা বাড়ি কখনও নিজের বাড়ি কিংবা স্থায়ী ঠিকানা মনে করেন না তিনি। যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য লিখেছে তারা কি তাদের প্রাপ্য জমি বুঝিয়ে দেবে-প্রশ্ন রাখেন আসপিয়া।
বিএসডি/ এলএল