আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুই রাজ্যের মধ্যকার সীমানা নিয়ে চলমান সংকটের মধ্যেই এবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করেছে আরেক রাজ্য মিজোরাম। রাজ্যটির আসাম সীমান্তবর্তী এলাকার পুলিশ মামলাটি দায়ের করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাসহ আসাম রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা ও প্রায় ২০০ অজ্ঞাত পুলিশ সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- আসাম রাজ্য পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল, একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল ও একজন পুলিশ সুপার।
এছাড়া মিজোরামের সঙ্গে সীমান্তবর্তী আসামের কাছার জেলার ডেপুটি কমিশনারকেও (ডিসি) মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসাম সীমান্তের কাছে অবস্থিত মিজোরামের কোলাসিব জেলার ভাইরেংটে পুলিশ স্টেশনে এই মামলা দায়ের করা হয়।
মিডিয়াগুলো বলছে, গত ২৬ জুলাই মিজোরামের এক পুলিশ ইনস্পেক্টর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেন। পরে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা, অস্ত্র আইন এবং মিজোরাম কনটেনমেন্ট অ্যান্ড প্রিভেনশন অব কোভিড-১৯ অ্যাক্ট ২০২০-তে মামলা রুজু করা হয়।
এফআইআরে মিজোরাম পুলিশ জানিয়েছে, আসাম পুলিশের আইজিপি’র নেতৃত্বে প্রায় ২০০ জন সশস্ত্র পুলিশের একটি দল জোর করে তাদের পুলিশ ক্যাম্প দখল করতে এসেছিল। মিজোরামের পুলিশ সংখ্যায় কম থাকায় ওই দলের সঙ্গে পেরে উঠতে পারেনি।
খবর পেয়ে কোলাসিবের পুলিশ সুপার ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং আসাম পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বোঝাপড়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু আসাম পুলিশ তাতে কান দেয়নি। উল্টে পুলিশ সুপারকে জানানো হয়, ওই এলাকা আসামের মধ্যে পড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সেখানে তারা পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করতে চায়।
এফআইআরে আরও বলা হয়েছে, এক পর্যায়ে আসাম পুলিশের একটি দল তাঁবু এবং ক্যাম্প বানানোর প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। জোর করে মিজোরামের পুলিশ চৌকি দখল করে সেখানে নিজেদের ক্যাম্প বানানোর লক্ষ্য ছিল তাদের।
অন্য দিকে দুই রাজ্যের দোষারোপ পাল্টা দোষারোপের মধ্যে শুক্রবার মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা অভিযোগ করেন, মিজোরাম পুলিশ প্রথমে গুলি চালায়নি। আসামের পুলিশ চালিয়েছিল।
তার দাবি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। হিমন্তও (আসামের মুখ্যমন্ত্রী) বলেছে- তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী। যদি প্রয়োজন পড়ে তা হলে সকল মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠক করতে রাজি আছি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ভারতের দুই রাজ্য আসাম এবং মিজোরামের পুলিশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে আসামের ৬ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। সীমানার অধিকার নিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যে ওই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। এরপর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলেও সেই জটিলতা এখনো কাটেনি।
দুই রাজ্যের পুলিশ বলছে, আসাম ও মিজোরামের সীমান্তবর্তী লায়লাপুর অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে উভয় রাজ্য। মিজোরামের বাসিন্দারা লায়লাপুরের জমি অবৈধভাবে দখল ও আসামের স্থানীয় অধিবাসীদের উচ্ছেদ করছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সীমানা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে দুই রাজ্যের পুলিশের লড়াই ও মৃত্যুর ঘটনা সেই ১৯৮৫ সালের পর আবার হলো। তখন সীমানা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই রাজ্য আসাম ও নাগাল্যান্ড।
বিএসডি/এমএম