নিজস্ব প্রতিনিধি
একই ধরনের দাবিতে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের অভিভাবকদের নিয়ে সংগঠিত অভিভাবক ফোরাম দুই দলে ভাগ হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেছে। শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল অভিভাবক ফোরাম শিশু শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে স্কুল খুলে দেওয়াসহ ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের নানা অনিয়ম তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এর আগে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) একই নামে আরেকটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের নানা অনিয়ম তুলে ধরেছিল।
শুক্রবার যারা সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তাদের আজ সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা মনজুর সাকলায়েন, রিয়াজ আনোয়ার ও আফরোজা আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তবে শুক্রবার যে অভিভাবক ফোরাম সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা আজ (শনিবার) সংবাদ সম্মেলন করা অভিভাবক ফোরামের সদস্যদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দাবি করেছে। তারা স্বেচ্ছাচারিতা ও কমিটির সভাপতি নিজ নামে আরেকটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল খুলে ব্যবসা পরিচালনা করার অভিযোগ তুলেছেন। স্কুলটির নাম ‘স্টেপিং স্টোন ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল’।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক ফোরামের সভাপতি এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা আগে থেকেই ভিন্ন মত নিয়ে কথা বলেছেন। ফেসবুকে আলাদা গ্রুপ খুলে প্রচারণা চালিয়েছেন। আমরা তাদের সময় দিয়েছিলাম। তবে তারা কোন জবাব দেয়নি। এরপর আমাদের কার্যনির্বাহী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নতুন স্কুল খোলা নিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলো নানা ধরনের অনিয়ম ও অভিভাবকদের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। সেই জায়গা থেকে আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে এ স্কুল খুলেছি। আমরা আশা করছি, এ স্কুল দিয়ে অন্য স্কুলগুলো শিখতে পারবে যে কম খরচে পড়াশোনা করা যায়।
শনিবারের সংবাদ সম্মেলন থেকে ৬টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে— শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে; ধাপে ধাপে টিকা নিশ্চিত সাপেক্ষে স্কুলগুলোর সন্তোষজনক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রস্তুতি দেখে এবং করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্কুল খুলতে হবে। (১ম ধাপে ১২-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ধাপে ১২ বছরের নিচ পর্যন্ত। প্লে গ্রুপ নার্সারি এবং কেজির ক্লাস ২০২২ সালের জানুয়ারির আগে কোনোভাবে নয়); দেশের সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে করোনাকালে মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অবশ্যই স্কুল ফি সমূহ শ্রেণিভেদে ৩০-৫০ শতাংশ কমাতে হবে; সরকারি নির্দেশনা মেনে ২০১৭ সালে প্রকাশিত গেজেট মোতাবেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো পরিচালনা করতে হবে; স্কুলগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় আরও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে ও স্কুলগুলোর কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য তদারক সংস্থা গঠন করতে হবে এবং স্কুলগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুল হক বলেন, আজকের করোনাকালীন বৈশ্বিক মহামারি এবং নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের শিশুদের তথা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা ও সুশিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার, অভিভাবক এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
পরিতাপের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যে বর্তমানে অধিকাংশ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিপর্যয় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে এমনকি সরকারি নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা না করে অত্যন্ত অমানবিক ও অযৌক্তিকভাবে অভিভাবকদের বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে অসামঞ্জস্যমূলক উচ্চ হারের টিউশন ফি আদায়ের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন, যা আমাদের সন্তানদের সাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিএসডি/এমএম