আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে ইউক্রেনবাসী। গতকালও কিয়েভের বিভিন্ন বেসামরিক ভবনে হামলা চালিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। পালটা প্রতিরোধ করেছে ইউক্রেনের নাগরিকরা। এ সময় চার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে রুবলের দরপতনের কারণে টানা তৃতীয় দিনের মতো মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ ছিল।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। আর ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউক্রেনে ন্যাটোর ‘নো ফ্লাই জোন’ এর বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধলে তা হবে পারমাণবিক যুদ্ধ।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে লড়াইয়ের জন্য সৈন্য পাঠাবে না বলে আবারও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, ইউক্রেনে হামলার জেরে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে শাস্তি দিতে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। রুশ অর্থনীতি দুর্বল করতে যুক্তরাষ্ট্র আরো পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, পুতিনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ন্যাটোভুক্ত এবং অন্যান্য দেশ মিলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল ধ্বংসের পথে। এজন্য টানা তিনদিন ধরে মস্কোর স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সেক্রেটারি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুতিনকে শাস্তি দিতে চান, সারা বিশ্ব বাজারকে সংকটে ফেলতে চান না।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। গতকাল বুধবার পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বরিস বলেন, ইতিমধ্যে দেখা গেছে, ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুতিনের বাহিনী। আর এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। তিনি বলেন, পুতিন ইউক্রেন নিয়ে বড় ভুল হিসাব কষেছেন। প্রধানমন্ত্রী বরিস বলেন, একটা সার্বভৌম দেশের ওপর হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। পুতিনের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, পুতিনের শাসনকে দুর্বল করতে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বরিস বলেন, পুতিন অবশ্যই ব্যর্থ হবেন এবং আমরা সফল হবো।
রুশ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে ইউক্রেনের আকাশ সীমায় ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণার জন্য ইউক্রেনের পক্ষ থেকে গত ক’দিন ধরে ন্যাটো জোটের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিজে একাধিকবার ন্যাটোর প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস গতকাল আবারো সেই সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। তিনি বলেন ন্যাটো যদি তেমন ঘোষণা দেয় এবং রাশিয়া যদি তা ভাঙার চেষ্টা করে তবে পুরো ইউরোপ জুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমেরিকার পক্ষ থেকেও এর আগে ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোনের সম্ভাবনা নাকচ করা হয়। তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে হামলা প্রতিহত করছে তাতে বড় কোনা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া রাশিয়ার জন্য দুরূহ হবে। তিনি বলেন, ইউক্রেনের মত বিশাল আয়তনের এবং প্রায় সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার মত একটি দেশ দখলে নেওয়া রাশিয়ার জন্য খুবই কঠিন হবে। তার মতে, ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে এক দেশে হামলা করা এক জিনিস আর ৪৪ মিলিয়ন মানুষ, যারা রাশিয়াকে চায় না তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা আরেক জিনিস। ওয়ালেস বলেন, তেমন কাজ করতে গেলে বেসামরিক লোকের মৃত্যুর সংখ্যা হুহু করে বাড়বে। উদাহরণ হিসাবে তিনি চেচনিয়া যুদ্ধ এবং পশ্চিমা শক্তির ইরাকে আক্রমণের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধলে তাতে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হবে। রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ মি লাভরভকে উদ্ধৃত করে বলছে ইউক্রেনের হাতে যদি পারমাণবিক অস্ত্র আসে তাহলে তা রাশিয়ার জন্য সত্যিকারের হুমকি তৈরি করবে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে পশ্চিমা শক্তির সমর্থন নিয়ে ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্র হাত করার চেষ্টা করবে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে ভিডিওর মাধ্যমে দেওয়া এক ভাষণে ল্যাভরভ একথা বলেন। তবে এই অভিযোগের স্বপক্ষে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
বিএসডি/ এফএস