আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেনের অলিভিয়া পোর্টে রাশিয়ার রকেট হামলায় বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে আহাজারি, শোকের মাতমে দিশেহারা পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান হাদিসকে হারিয়ে বাবা বাকরুদ্ধ ও মা বেহুঁশ।
বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে ইউক্রেনের অলিভিয়া পোর্টে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেটে করে বোমা হামলা চালায় রাশিয়া। এতে জাহাজে থাকা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হন। তিনি ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আরিফের নিহতের খবর শোনার পর ওই ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি বেতাগীতে চলছে শোকের মাতম।
হাদিসের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ি ভর্তি মানুষ। বাকরুদ্ধ বাবা মাকে শান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। ইউক্রেনে জাহাজটি আটকা পরার পর থেকেই তাদের পরিবারের সকলের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল। নানা শঙ্কার মধ্যে ছিলেন তারা। তাদের সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। সন্তানের লাশ ফেরা নিয়ে এখন আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটিতে পাঁচ বছর যাবৎ চাকরি করছিলেন আরিফ। ইউক্রেনের সময় বুধবার বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাদেও জাহাজে হামলা হয়েছে। জাহাজে আরিফসহ বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। বাকিরা সুস্থ আছেন।
নিহত হাদিসের ছোট ভাই মো. তারেক বর্তমান সময়কে বলেন, ‘আমরা জাহাজে থাকা আরিফের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন, মা বেহুঁশ।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সময়ে ফোনে বলেন,‘ভাই আমাদের আর ভাঙ্গা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক ঘরের কাজ ধরবো।ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে আরিফ শঙ্কিত ছিল বলেও জানান তিনি। বাড়ি ফেরার তাড়া অনুভব হয়েছিল আরিফের কথায়। বাড়ি ফিরে কী কী কাজ করবে, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার একটি আলোচনাও করেন। তারেক আরও বলেন, তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, যাতে দ্রুত তার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
তারেক বলেন,‘এক নজরের জন্য হলেও আমার ভাইয়ের লাশটা শুধু দেখতে চাই। ভাইকে হারিয়ে আমাদের পরিবারটি পথে বসে গেলো। এমনটা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছোট ভাই তারেক।
প্রসঙ্গত, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেন শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ।
বিএসডি/ এফএস