নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউরোপে যুদ্ধের দামামায় ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকেপড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি সমৃদ্ধির ২৯ নাবিক রয়েছেন চরম শঙ্কার মধ্যে। দেশটির বন্দর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ফেরা অনিশ্চিত হয়ে আছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানার এই জাহাজটির। এর নাবিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে কর্তৃপক্ষ। তবে কবে নাগাদ এটি ইউক্রেন ত্যাগ করতে সক্ষম হবে সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোন ধারণা করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে রাশিয়ার বন্দরে বিএসসির আরও একটি জাহাজ নোঙ্গর করা অবস্থায় আছে, যা তেল নিয়ে চীনের উদ্দেশে যাত্রা করার অপেক্ষায়। তবে দ্বিতীয় জাহাজটির ব্যাপারে তেমন শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসসি।
পণ্য আনার জন্য বাংলার সমৃদ্ধি নামের জাহাজটি গত ২১ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইরেগলি বন্দর থেকে ছেড়েছিল ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি তা ইউক্রেনে পৌঁছায়। ২৩ ফেব্রুয়ারি অলভিয়া বন্দরে নোঙ্গর করে জাহাজটি। এরপর থেকে তা অপেক্ষায় ছিল পণ্য বোঝাই হওয়ার জন্য। কিন্তু এ সময়টি ছিল রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার প্রস্তুতিকাল। ২৪ তারিখ শুরু হয়ে যায় বিমান ও মিসাইল হামলা। এ সময় কৃষ্ণসাগরসহ সংলগ্ন জলসীমা চলে আসে যুদ্ধবিমান ও মিসাইলের আওতায়। এ অবস্থায় যোগাযোগ করা হলে বিএসসির পক্ষ হতে পণ্য না নিয়েই ফিরতে বলা হয়। কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায়।
বিএসসির নির্বাহী পরিচালক ড. পীযুষ দত্ত জনকণ্ঠকে জানান, বাংলার সমৃদ্ধি অলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে নোঙ্গর করে আছে। জাহাজে কর্মরত নাবিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে কবে নাগাদ জাহাজটি ইউক্রেন ত্যাগ করতে পারবে।
এদিকে জাহাজে থাকা ২৯ নাবিক রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে। খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তাদের স্বজনরা। পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিএসসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জাহাজের নাবিকরা জানেন না, কতদিন তাদের এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে ভাসমান থাকতে হবে। সে কারণে তারা জাহাজে থাকা খাবার ও পানীয় রেশনিং করে ব্যবহার করছেন। অপেক্ষায় রয়েছেন পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার প্রত্যাশায়।
রাশিয়ার বন্দরে আরেক জাহাজ ॥ রাশিয়ায় রয়েছে বিএসসির মালিকানার জাতীয় পতাকাবাহী আরেকটি জাহাজ। এমটি বাংলার অগ্রদূত নামের এ জাহাজটি অয়েল ট্যাঙ্কার। রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে এর চীনে যাবার কথা রয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে বাংলার অগ্রদূত নিয়ে অতটা চিন্তা নেই বলে জানাচ্ছে বিএসসি।
বিএসসির দায়িত্বশীল শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ জাহাজটি সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি শিপিং লাইনের কাছে চার্টারে রয়েছে। রাশিয়া থেকে তা চীনের উদ্দেশে নিয়মিত যাত্রার মতোই ছেড়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, বিএসসির জাহাজ সাধারণত বাংলাদেশের সরকারী আমদানির পণ্য পরিবহন করে। তবে মাঝেমধ্যে বিদেশী শিপিং লাইনগুলোও ভাড়া নিয়ে থাকে।
বিএসসি সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সেখানে নোঙ্গর করে থাকা দুই জাহাজের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে। সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির এবং কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট রয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি)
বিএসডি/ এফএস