আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেন ইস্যুতে ফের বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আগামী মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে উভয় নেতা আলোচনা করবেন। তবে মঙ্গলবারের এই বৈঠক মুখোমুখি ভাবে নয়, অনুষ্ঠিত হবে ভিডিওকলের মাধ্যমে।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি। জলবায়ু, ভূ-রাজনীতি, মানবাধিকার ও ইউক্রেন সীমান্তে বিপুল সংখ্যক রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলছে। তবে সেসব উত্তেজনাকে এক পাশে রেখেই মঙ্গলবার ফের বৈঠকে বসতে চলেছেন বাইডেন ও পুতিন।
ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। দেশটির সীমান্তে রুশ বাহিনী সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে বলে গত কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এবার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন রুশ সামরিক বাহিনী ২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে। গত শুক্রবার গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট ও বার্তাসংস্থা এপি।
ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে আসা গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি স্থানে রাশিয়ার সেনা, ট্যাংক ও কামানের সমাবেশ ঘটানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে ইউক্রেন সীমান্তে ৯৪ হাজার সেনা রয়েছে, যা এক লাখ ৭৫ হাজারে উন্নীত হতে পারে। এছাড়া আগামী মাসেই হামলার আশঙ্কা করা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউক্রেনও।
এরপরই ইউক্রেন ইস্যুতে আগামী মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট পুতিন বৈঠকে বসবেন বলে ঠিক হয়। শনিবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি জানিয়েছেন, ‘(প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে) ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি এবং কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ জানাবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।’
তিনি আরও জানান, ‘এর পাশাপাশি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখণ্ডতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে দৃঢ় সমর্থন রয়েছে সেটিও পুতিনকে জানাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’
এছাড়া কৌশলগত স্থিতিশীলতা, সাইবার নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুও বৈঠকের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলেও জানান জেন সাকি।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন শনিবার জানিয়েছে যে, মঙ্গলবারের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েই কথা বলবেন উভয় নেতা। এছাড়া চলতি বছরের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত বাইডেন-পুতিনের প্রথম বৈঠকে যে সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়েও আসন্ন বৈঠকে আলোচনা হবে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শনিবার রয়টার্সকে জানান, ‘আগামী মঙ্গলবার উভয় নেতার মধ্যে আলোচনা হবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, জেনেভায় অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকের সমঝোতা ও চুক্তি বাস্তবায়ন এবং অবশ্যই ইউক্রেন ইস্যুও বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে থাকবে।’
অবশ্য মঙ্গলবার ঠিক কখন পুতিন ও বাইডেনের মধ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে, তা জানানো হয়নি।
এর আগে ধুঁকতে থাকা সম্পর্ক মেরামতের ক্ষীণ আশা নিয়ে গত জুন মাসে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন এবং জো বাইডেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ভিলা লা গ্রেঞ্জে সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর আগামী মঙ্গলবার ফের বৈঠকে বসতে চলেছেন তারা।
বৈরী এই দুই দেশের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে তলানিতে পৌঁছেছে। গত মার্চে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্টকে খুনি বলেও মন্তব্য করেছিলেন। মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নজিরবিহীন অবনতির মাঝে গত জুনে জেনেভায় বাইডেন-পুতিন সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
আর এখন ইউক্রেন সীমান্তে ৯৪ হাজারের বেশি রুশ সেনা মোতায়েন এবং এর জেরে সৃষ্ট উত্তেজানার মধ্যেই বৈঠকে বসতে চলেছেন বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দুই দেশের নেতা।
বিএসডি/ এসএ