আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়ার মিত্র ভারত ও চীন। জাতিসংঘের সাধারণ সভার ৭৭তম অধিবেশনে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে সমঝোতায় আসতে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে দেশ দুটি। চীনের বক্তব্য হচ্ছে- যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। ভারতও একই ধরনের মতামত দিয়ে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব করেছে।
অধিবেশনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাদের উচিত যুদ্ধ বন্ধ করে বিশ্বকে সংকট থেকে মুক্তি দেওয়া। উন্নয়নশীল দেশগুলো যুদ্ধের ফলে বর্ণনাতীত সমস্যায় পড়েছে। যুদ্ধ বন্ধে যা যা করা দরকার, চীন তা করতে রাজি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি শান্তি আলোচনার আহ্বান জানান তিনি।
ওয়াং জাতিসংঘে এসে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবার মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি কুলেবাকে বলেছেন, দু’পক্ষ শান্তি বজায় রাখতে আগে নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করতে হবে। এ জন্য আলোচনায় বসতে হবে। আমরা যুদ্ধ বন্ধ করে ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকরী ও দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুুলতে একমত। এর আগে সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকেও যুদ্ধাবসানের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বেইজিংয়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারতও শান্তির পক্ষে মতামত দিয়েছে। যুদ্ধের অবসান চেয়ে জাতিসংঘে বক্তব্য দিয়েছে দেশটি। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আমরা শান্তির পক্ষে আছি, সেটা বিশ্ববাসী জেনেছে। ভারতের উদ্দেশ্য সব সময় সোজাসাপ্টা ও সৎ। আমরা শান্তির পক্ষে সব সময় থাকব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রথম থেকে ভারত সংলাপ ও কূটনৈতিক পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
জাতিসংঘে ভারত ও চীনের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে রাশিয়া। এ ছাড়া মালির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ মাইগা জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।
এদিকে ভারতকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করা নিয়ে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়েছে মস্কো। জাতিসংঘের চলমান সাধারণ সভায় এই দাবি তোলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ভারতের পাশাপাশি ব্রাজিলকেও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করার দাবি তুলেছে মস্কো। ল্যাভরভের মতে, ভারত এবং ব্রাজিল নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য ‘যোগ্য দাবিদার’। এই দুই দেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
ল্যাভরভ বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদকে আরও বেশি মাত্রায় গণতান্ত্রিক করার মধ্যে লাভ দেখছে মস্কো। পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধি রাখার বিষয়েও সুর চড়িয়েছেন ল্যাভরভ। তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশেষ করে, ভারত এবং ব্রাজিল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে এবং তারা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার যোগ্য দাবিদার। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছে নয়াদিল্লি। এবার সেই দাবিকে আরও জোরালো করে দিলেন মস্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
একই ভাষণে ল্যাভরভ বলেন, গণভোটের পর ইউক্রেনের অধীকৃত অঞ্চল মস্কোর সঙ্গে একীভূত হলে সেসব অঞ্চলকে পূর্ণ সুরক্ষা দেবে রাশিয়া। মস্কোর সঙ্গে একীভূত হতে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ভোটের ফলাফলের আগেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেন। যদিও ভোটকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন। চার অঞ্চলে অনুষ্ঠিত গণভোট নিয়ে কিয়েভের অভিযোগ- নাগরিকদের ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং ভোটের সময় ওই অঞ্চল থেকে কাউকে বের হতে দেওয়া হয়নি। গণভোটের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের অনুরোধ করেছে ইউক্রেন। সূত্রঃ খবর এএফপি, বিবিসি, রয়টার্সের।
বিএসডি/এফএ