দুর্ভাগ্য বোধ হয় একেই বলে।
কোনো ঝুঁকি না নিয়েই যাঁদের নাম নেওয়া যায়, তাঁদের কথা বলার উপায় নেই। ২০১৮ ব্যালন ডি’অরেই গোল্ডেন বয়ের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। কারণ, বয়স ১৯ হলেও দক্ষতায় তাঁকে তখন আর তরুণদের মধ্যে রাখতে রাজি হননি পুরস্কারদাতারা। সেই এমবাপ্পে তো এখন মহাতারকাই। আরও একজন হয়তো আলো ছড়াতেন এবারের ইউরোতে। কিন্তু ক্লাবে গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়া আরলিং হরলান্ড নরওয়েকে ইউরোতেই নিতে পারেননি। ইউরোতে তারকাদ্যুতি তাতে কমছে না। বরং তরুণ প্রতিভার ‘তালিকা’টা এত বড় যে টুর্নামেন্ট শেষে তাঁদের যে কেউই হয়ে যেতে পারেন সবচেয়ে বড় তারকা।
প্রথম দেখায় কখনো কাকা, কখনো সের্হিও আগুয়েরোর কৈশোরবেলার কথাও মনে করিয়ে দেন জোয়াও ফেলিক্স। আবির্ভাবে চমকে দেওয়া এই উইঙ্গারের সেরাটা এখনো বের করে আনতে পারেনি আতলেতিকো মাদ্রিদ। কিন্তু সন্দেহাতীতভাবেই প্রজন্মের সেরাদের একজন পর্তুগিজ উইঙ্গার। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের দলে দুর্দান্ত সব ফরোয়ার্ডের ভিড়েও মূল একাদশে জায়গা নিশ্চিত তাঁর। দুই বছর ধরে জমে ওঠা ক্লাব ফুটবলের হতাশা ভুলতে ইউরোর চেয়ে ভালো উপলক্ষ পাবেন না ২১ বছরের ফেলিক্স।
হতাশা ভুলতে চাইবেন সুইডেনের দেয়ান কুলুসেভস্কিও। জুভেন্টাসের হয়ে এ মৌসুমে মোটে চার গোল করেছেন এই ফরোয়ার্ড। ইউরোর শুরুটাও হচ্ছে দুঃসংবাদ দিয়ে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় স্পেনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না কুলুসেভস্কি। পরের ম্যাচগুলোতেও তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় আছে।
জামাল মুসিয়ালার সমস্যা আবার উল্টো। ক্লাবে মৌসুমটা কেটেছে দুর্দান্ত। বায়ার্ন মিউনিখের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক ও গোলের রেকর্ড করে ফেলেছেন। কিন্তু জার্মানি দলে ১৮ বছর বয়সী কতটুকু সুযোগ পাবেন, এ নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।
মুসিয়ালার একাদশে জায়গা পাওয়াটা অনিশ্চিত মূলত কাই হাভার্টজের কারণে। এই মৌসুমেই রেকর্ড দলবদলে চেলসিতে যোগ দিয়েছেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও ক্লাব মৌসুমটা শেষ করেছেন দুর্দান্তভাবে। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের প্রথম গোলের জন্য ফাইনালকে বেছে নিয়ে চেলসিকে মহা আরাধ্য শিরোপাটা এনে দিয়েছেন ২১ বছর বয়সী হাভার্টজ। জার্মান দলেও ইয়োখিম লুভের বড় অস্ত্র হতে পারেন তিনি।
আবির্ভাবেই ঝড় তুলেছেন, এমন কিছু এ মৌসুমে যদি কারও নামের সঙ্গে লিখতেই হয়, সেটি পেদ্রি। ১৭ বছরেই বার্সেলোনার মূল একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন, খেলেছেন ৫০টির বেশি ম্যাচ। একমাত্র স্পেন দলে খেলেন বলেই হয়তো ইউরোর শুরুতে একাদশে না–ও দেখা যেতে পারে তাঁকে, কিন্তু সুযোগ পেলে আলো ছড়ানোর সব আভাসই আছে তাঁর মধ্যে।
বয়সের দিক থেকে পেদ্রিকেও ছাড়িয়ে গেছেন জুড বেলিংহাম। ১৮ ছোঁয়ার আগেই খেলবেন ইউরো। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সিতে যেমন খেলেছেন, তাতে তাঁর কাছে প্রত্যাশা বেড়েছে ইংলিশ সমর্থকদের। শুধু ইংল্যান্ডের ডাগআউটে গ্যারেথ সাউথগেটের উপস্থিতি মূল একাদশে তাঁর জায়গা অনিশ্চিত করে দিয়েছে।
সাউথগেটেরই–বা কী দোষ! ইংল্যান্ড দলে ফিল ফোডেনের মতো এক মিডফিল্ডার আছেন। রুদ খুলিতের মতো কিংবদন্তি যাঁকে লিওনেল মেসির সঙ্গে তুলনা করেছেন। ম্যানচেস্টার সিটিতে গার্দিওলার অধীন দিন দিন আরও ধারালো হচ্ছেন ফোডেন। তাঁর কারণেই একাদশে জায়গা না–ও হতে পারে চেলসিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো মিডফিল্ডার মেসন মাউন্ট আর আর্সেনালের ১৯ বছর বয়সী উইঙ্গার বুকায়ো সাকার। মাঝমাঠে আলো ছড়ানোর সম্ভাবনা নেদারল্যান্ডসের গ্রাভেনবার্চেরও। কিন্তু আরেক ১৯ বছর বয়সী বেলজিয়ামের জেরেমি ডোকুর মতোই একাদশে জায়গা নিশ্চিত নয় তাঁরও।
জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর নেদারল্যান্ডসের ম্যাটাইস ডি লিখট কিছুটা যেন ছন্দহারা। কিন্তু এখনো নতুন প্রজন্মের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন এই ২১ বছর বয়সী। মহাতারকা হয়ে ওঠার সময় আসলে পুরোটাই পড়ে আছে তাঁর সামনে। কিন্তু সেই সুযোগ যদি প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নেমেই নিতে পারেন, মন্দ কী!