আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের একটি কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় কমপক্ষে ৬৮ জন বন্দি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১২ নভেম্বর) এই দাঙ্গা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ইকুয়েডরের ওই একই কারাগারে পৃথক একটি দাঙ্গায় কমপক্ষে ১১৬ জন বন্দি নিহত হয়েছিলেন। বন্দিদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর মধ্যে দ্বন্দের জের ধরে প্রাণঘাতী ওই দাঙ্গা হয়েছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, ইকুয়েডরের গুয়াইয়াস প্রদেশের গুয়াইয়াকুইল শহরের পেনিটেনসিয়ারিয়া দেল লিটোরাল কারাগারে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সহিংস দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর ভেতরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে দেখা গেছে।
দাঙ্গার পর কারাগারের ভবনগুলোতে পুলিশ বন্দুক ও বিস্ফোরক খুঁজে পেয়েছে বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
চলতি বছর দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির কারাগারগুলোতে সংঘটিত দাঙ্গায় প্রায় ৩০০ জন বন্দি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরের দাঙ্গা ছিল ইকুয়েডরের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী।
বিবিসি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইকুয়েডরের গুয়াইয়াস প্রদেশের গুয়াইয়াকুইল শহরের পেনিটেনসিয়ারিয়া দেল লিটোরাল কারাগারে দু’টি পৃথক উইংয়ে দুই গ্রুপ গ্যাংয়ের সদস্যদের বন্দি রাখা হয়েছিল। শুক্রবার একটি গ্যাংয়ের বন্দিরা একটি গর্তের মাধ্যমে হামাগুড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী উইংয়ে চলে যায় এবং তাদের ওপর হামলা করে।
এরপরই সেখানে বিপুল এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দাঙ্গার পর কারাগারের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে দেশটির সেনাবাহিনীর শত শত কর্মকর্তা ও সৈন্যকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। দাঙ্গায় আরও ২৫ জন বন্দি আহত হয়েছেন।
এদিকে টুইটারে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো কারাগারে দাঙ্গা ও প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছেন। তিনি নিহত বন্দিদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, কারণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তারাই লাভবান হয়।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ইকুয়েডরের কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় কমপক্ষে ১১৬ জন নিহত হয়েছিলেন। সেসময় কারাগারে নিরাপত্তা বাহিনীর আরও বেশি সংখ্যক সদস্য পাঠনোর ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে দেশের কারাগারগুলোতে প্রাণঘাতী দাঙ্গা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ের ঘোষণাও দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গুইলারমো।
দক্ষিণ আমেরিকা থেকে মেক্সিকো হয়ে মাদকের যেসব চালান যুক্তরাষ্ট্র যায়, সেগুলোর প্রধান রুট হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে ইকুয়েডর। বিপুল ঝুঁকি এবং একই সঙ্গে প্রচুর অর্থ থাকায় এ কারণে ইকুয়েডরের বন্দর এলাকাগুলোতে প্রভাব বাড়ছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের, যারা কোনো না কোনোভাবে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত।
গুয়াইয়াকুইল ইকুয়েডরের প্রধান বন্দর শহর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শহরটিতে এসব গ্যাংয়ের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি।
গত জুলাই মাসে ইকুয়েডরের দু’টি কারাগারে কয়েদিদের এ রকম সংঘাতে ২৭ কারাবন্দি নিহত হয়েছিলেন। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৭৫ জন। আর ২০২০ সালে দেশটির বিভিন্ন কারাগারে কয়েদিদের ‘যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়ায় প্রাণ গিয়েছিল মোট ১০৩ কয়েদির।
বিএসডি/এসএসএ