নিজস্ব প্রতিবেদক
শারদ ঋতুর আশ্বিন মাসের নবম দিন আজ। ঋতুচক্রের বর্ষ পরিক্রমায় শরতের আগমন ঘটে বর্ষার পরেই। বর্ষার বিষন্নতা পরিহার করে আসে শরৎ। দিনে তালপাকা রোদ আর রাতে ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করে নতুন ঋতুর প্রথম সপ্তাহ পার করেছে নগরবাসী। তবে স্বস্তির বৃষ্টি সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে পা দেয় আশ্বিন। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় আজ সকাল থেকেই ঝরছে বৃষ্টি। আর এ দিনেই খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশ ভাজা যেন নগরবাসীর জন্য ওয়েদার ডিমান্ড। তবে দামের আগুনে হাত দেওয়া যাচ্ছে না সেই ইলিশে। বাজারে গিয়ে ইলিশ ধরলেই দিতে হচ্ছে হাজার টাকা।
খুচরা বাজারে ৫০০ গ্রামের ওজনের ইলিশ এক হাজার থেকে ১১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর যদি এক কেজি ২০০ বা ৩০০ গ্রামের ওজনের ইলিশ কিনতে চান তাহলে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা। তবে বৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত ইলিশ না থাকায় দাম একটু বেশি বলে মনে করছেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর রায়ের বাজারে ৫ থেকে ৬ জন বিক্রেতা ইলিশ মাছ বিক্রি করেন। তাদের মধ্যে দুজনের কাছে বড় মাছ রয়েছে। অন্যদের এক কেজি ওজনের কম মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়। বিক্রেতারা এক কেজি ২০০ বা ৩০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম চান ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা। দর কষাকষি করে দুই হাজার টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৭০০-১৮০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজিপ্রতি ১৫০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের প্রতিকেজি দাম ১০০০-১১০০ টাকা।
শুধু রায়ের বাজার নয়, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর ও মোহাম্মদপুর টাউন হলেও একই দামে ইলিশ বিক্রি করতে দেখা যায়।
ইলিশ বিক্রেতা আনিস মিয়া জানান, বাজারে আজ ইলিশ সরবরাহ খুব কম। তবে অন্যান্য দিনে তুলনায় দাম বেশি না। ভালো মাছ খেতে হলে বেশি দাম দিতে হবে। বাজারে যে ইলিশ আসে ক্রেতাদের চাহিদা তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। তাই মাছের দাম অনেক বাড়তি।
সামনে ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে বলেও জানান তিনি।
এতো দাম দিয়ে কোনো অবস্থায় সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ খাওয়ার উপায় নেই বলে জানিয়েছেন ফরিদ নামে এক ক্রেতা।
তিনি বলেন, বাজারে অনেক জায়গার ইলিশ আসে। কেউ বলে চাদপুরের, আবার কেউ বলে বরিশালের আবার কেউ বলে চট্টগ্রামের। যেখানের হোক দাম কিন্তু আমাদের নাগালের বাহিরে। একটি বড় মাছ কিনতে দিতে হবে কমপক্ষে তিন হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে আমাদের হাফ মাসের বাজার খরচ হয়ে যাবে। ছোট মাছও হাজারের নিচে নাই।
প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের ১৫ নম্বর ফুটপাতের ওপর মাছের অস্থায়ী বাজার বসে। সেখানে তুলনামূলক সচ্ছল ব্যক্তিরা বাজার করেন। কেউ আবার দামি দামি গাড়ি নিয়েও আসেন। রাজধানীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে খুচরা মাছের দাম একটু বেশি রাখা হয়। সেখানে আজ প্রতি কেজি ইলিশ ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সাদেক নামে এক ক্রেতা বলেন, কয়েকটি দোকানে দাম দেখলাম। কেউ দাম কমাচ্ছে না। বাসা থেকে ইলিশ নিতে বলেছে, তাই নিতে হচ্ছে। আর মৌসুমি মাছ হিসেবে দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
দাম কেমন পড়ল— জানতে চাইলে এ ক্রেতা বলেন, রায়ের বাজার থেকে এক কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ কিনেছি। অনেকক্ষণ দর কষাকষির পর কেজিপ্রতি দুই হাজার টাকায় রাজি হন বিক্রেতা। একটি মাছের দাম পড়েছে দুই হাজার ৬০০ টাকা।
এদিকে এ বছর ইলিশ কম ধরা পড়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই দাম বেশি ছিল ইলিশের। যেখানে ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ইলিশ আহরণ হয়েছে ৮১ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন, একই সময়ে ২০২৪ সালে ইলিশ আহরণ হয়েছে ৫৬ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন।