আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ইসরায়েলকে চার দিন সময় দিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। যদি এই বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ফের লোহিত ও ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলি ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজ-নৌযানে হামলা শুরু হবে বলে হুমকি দিয়েছে হুথিরা।
হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা আবদুল মালিক আল হুথি সোমবার এক ঘোষণায় এ আল্টিমেটাম দেন। ঘোষণায় আল হুথি বলেন, “আমরা ইসরায়েলি শত্রুদের চার দিন সময় দিচ্ছি। মধ্যস্থতাকারীদের অনেক প্রচেষ্টার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি এসেছে। তাই মধ্যস্থতাকারীদের সম্মানে এই চার দিন সময় দেওয়া হচ্ছে।”
“যদি চার দিন পরেও ইসরায়েলি বাধার কারণে গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তার প্রবাহ স্বাভাবিক না হয়, সেক্ষেত্রে আমরা আবার সাগরে ইসরায়েল এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত নৌযানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন। সেই সঙ্গে আরও ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় তারা।
অতর্কিত সেই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন ৪৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন এক লক্ষাধিক।
ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর পর নভেম্বর থেকে লোহিত ও ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েল এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হামলা শুরু করে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ইরানের সমর্থনপুষ্ট এই গোষ্ঠীটির হাইকমান্ড সে সময় বলেছিল, হামাস ও গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ পদক্ষেপ নিয়েছে গোষ্ঠীটি।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত লোহিত ও ভূমধ্যসাগরে শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হুথিরা। এসব হামলায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজ ডুবে গেছে এবং নিহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন নাবিক।
হুথিদের হামলার কারণে অনেক জাহাজ তাদের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়, ফলে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা যেদ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও তৎপরতায় গত ১৯ তারিখ গাজায় তিন পর্বের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল ও হামাস। এই বিরতির প্রথম পর্বের মেয়াদ ছিল ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রথম পর্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হামাস প্রস্তাব দিয়েছিল, যে ইসরায়েল যদি গাজা উপত্যকা থেকে সব সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে নিজেদের কব্জায় থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। কিন্তু ইসরায়েল এই শর্তে সম্মত না হয়ে গত ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ফলে চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতি শুরু হয় গাজায়।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, যদি জিম্মিদের মুক্তিদান অব্যাহত রাখে হামাস, শুধু তাহলেই বাধা তুলে নেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে আল্টিমেটাম দিলো হুথি বিদ্রোহীরা। শুক্রবার আবদুল মালিক আল হুথি আল্টিমেটাম দেওয়ার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস।
সূত্র : রয়টার্স