আন্তর্জাতিক ডেস্ক
টানা ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বর্বর এই আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি দেশটি।
এছাড়া গত বছর হামাসের নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়েও আছে ক্ষোভ, আলোচনা-সমালোচনা। এমন অবস্থায় আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ পদত্যাগ করতে পারেন ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রধান হারজি হালেভি।
ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এমন খবরই সামনে এনেছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
শুক্রবার স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবানীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হারজি হালেভি ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তার পদ থেকে সরে যেতে পারেন।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র মারিভ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, “৭ অক্টোবরের হামলার সেই ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়ার এক মাস পর হার্জি হালেভি ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তার পদ থেকে অবসর নেবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ঘোষণা করেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যকার আশপাশের অঞ্চলগুলোতে যে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছিল সেগুলোর তদন্ত অবশ্যই জানুয়ারির শেষের মধ্যে শেষ করতে হবে।
কাটজ ইসরায়েলি চিফ অব স্টাফকে জানিয়েছিলেন, তদন্তের ফলাফলগুলো সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত কোনও নতুন জেনারেল নিয়োগ করা হবে না। কাটজের নির্দেশনার আলোকে সংবাদপত্র মারিভ ইঙ্গিত দিয়েছে, এই সময়সীমা হালেভির পদত্যাগ ত্বরান্বিত করতে পারে।
ইসরায়েলি এই সংবাদপত্রটি দেশটির সম্প্রচারকারী চ্যানেল ১২-এর একটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনও উল্লেখ করেছে, যেখানে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে— হালেভি অবসর নেওয়ার আগে দুটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। আর তা হলো: লেবাননে যুদ্ধের অবসান এবং গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার তদন্তের ফলাফল সামরিক ও জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করা।
আনাদোলু বলছে, ইসরায়েলি সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাম্প্রতিক আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে— ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মহাপরিচালক জামির বর্তমান সেনাপ্রধান হারজি হালেভির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী।
অবশ্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উভয়ই গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে: “হালেভির পদত্যাগের বিষয়ে বাহিনীর চিফ অব স্টাফ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে কোনও চুক্তি নেই।”
এছাড়া মারিভের রিপোর্টের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াও দেননি হারজি হালেভি বা জামির।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
এমন অবস্থায় গত মাসে গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।