বর্তমান সময় ডেস্কঃ
নির্বাচন কমিশনের ডাকা বিকেলের সংলাপে অংশ না নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
শনিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর তোপখানা রোডে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এ কথা জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেওয়া খোলা চিঠিটি সংবাদ সম্মেলনে পড়ে শোনান সাইফুল হক। সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে খোলা চিঠিটি পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, আমরা এই আলোচনা সভায় (সংলাপ) অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করছি না। আমরা সুস্পষ্টভাবে মনে করি, সরকার প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধাত্মক অবস্থান থেকে বিএনপিসহ তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে তা কোনোভাবেই একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সহায়ক নয়। এরকম অবস্থায় একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে চরম দায়িত্বহীন পদক্ষেপ।
সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনের এরকম তৎপরতা হবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো সরকার ও সরকারি দলের আরেকটি নীলনকশা, আরেকটি সাজানো নির্বাচনী তামাশা মাত্র। আমরা মনে করি, বিদ্যমান অবস্থায় তফসিল ঘোষণার অর্থ হবে বিরোধীদলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রেখে সরকার ও সরকারি দলের নির্বাচনী নীলনকশা বাস্তবায়নের সহযোগী হওয়া, ভোটের অধিকার বঞ্চিত দেশের জনগণ ও বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা।
খোলা চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে প্রস্তাব রেখে সাইফুল হক বলেন, আপনারা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সরকার বা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নন। দেশের প্রবল বৈরী ও সংঘাত-সহিংস পরিস্থিতিতে আপনাদের এ অবস্থান সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিতে পারেন– দেশে এখন অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
তিনি আরও বলেন, এ কারণে তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দিয়ে নির্বাচনের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আপনারা প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে বাস্তব ও নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন। সরকার ও সরকারি দল যদি তারপরও জবরদস্তি করে আপনাদের এক তরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে নানাভাবে বাধ্য করতে চায়, সেক্ষেত্রে নৈতিক ও বিবেকের দায় নিয়ে কমিশনের দায়িত্ব থেকে আপনারা সরে দাঁড়াতে পারেন। কারণ, দেশ ও দেশের মানুষ কোনোভাবেই আর একটি ব্যর্থ, অকার্যকর ও তামাশার নির্বাচনের দায় নিতে পারবে না।
এই বাম নেতা বলেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিরোধী দলগুলো ও জনগণকে আস্থায় না নিয়ে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট আরও ঘনীভূত করবে এবং দেশকে ভয়ংকর বিপর্যয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে। এ ধরনের একটা পরিস্থিতি তৈরির দায়দায়িত্ব আপনাদের ওপরও বর্তাবে।
সংবাদ সম্মেলনে ২৮ অক্টোবর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা মহাসমাবেশে সরকারের পরিকল্পিত হামলা, বিএনপির মহাসচিবসহ বিএনপি ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলার ঘটনাতে তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার জনগণ ও বিরোধীদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা বিরোধীরা রাজপথে আছি, থাকব। রোববার থেকে আবারও আমরা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করব। আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, সরকার তার এক তরফা পাতানো নীলনকশার যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। তাদের অনুগত ও বশংবদ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটা তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামেলী, আনসার আলী দুলাল, মীর নেওয়াজ হোসেন মোস্তাক, আকবর খান প্রমুখ।
বিএসডি/আরপি