ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বড় আকার ধারণ করতে না পারলেও ক্ষতি করে গেল ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের। এর প্রভাবে দুই রাজ্যের উপকূলের ঘরবাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত। আর নিহত হয়েছেন চারজন। ওডিশায় মারা গেছেন তিনজন, আর পশ্চিমবঙ্গে মারা গেছেন একজন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ আকারে আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ছয়টায় উত্তর ওডিশা ও তৎসংলগ্ন ঝাড়খন্ড এলাকায় অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্র দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শংকরপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন অঞ্চল। এ ছাড়া নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় গতকাল বুধবার রাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, বইছে ঝোড়ো হাওয়া।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ইয়াসের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৩৪টি নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এই বাঁধ ভাঙায় রাজ্যের বহু গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবিয়ে দিয়েছে বহু বাড়ি, ফসল খেত, মাছের ভেড়ি, মাছ চাষের পুকুর। রাজ্যের ১৪টি জেলা ইয়াসের ক্ষতির মুখে পড়েছে।
মমতা বলেন, ১ কোটি মানুষ আজ ক্ষতিগ্রস্ত। ৩ লাখ কাঁচা ও আধা পাকা বাড়ি ভেঙে গেছে, ডুবে গেছে। ১৬ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। ডুবে গেছে গঙ্গাসাগরের ঐতিহাসিক কপিলমুণি আশ্রমও।
গতকাল বুধবার সকালে ইয়াস প্রথম আছড়ে পড়ে ওডিশার বালাসোরের দক্ষিণে। ওডিশার রিলিফ কমিশনার পি কে জেনা বলেন, সেখানে নদীর পানির উচ্চতা ২১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। রাজ্যের বালাসোর ও কেওনঝারে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন।
ইয়াস ওডিশায় ব্যাপক তাণ্ডব চালালেও সেভাবে তাণ্ডব চালায়নি কলকাতায়। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের বৈশিষ্ট্য ছিল ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস। এই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে গেছে দুই রাজ্যের শত শত গ্রাম, হাটবাজার, লোকালয়, বাড়িঘর।
কলকাতাকে ছাড় দিয়েছে ইয়াস। বসায়নি জোরালো কোপ। শুধু বৃষ্টি ও সামান্য ঝোড়ো হাওয়ার কারণে এ শহরের বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। কিছু এলাকায় দু-একটি পুরোনো গাছ ভেঙে পড়েছে। কলকাতার বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, কলকাতার যেসব এলাকায় পানি জমে আছে, সেই সব এলাকায় নিরাপত্তার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইয়াসের জেরে পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছে একটি শিশু। সুন্দরবন অঞ্চল থেকে বাঘ, হরিণ, কুমির, সাপ বেরিয়ে যাওয়ার খবর মিলেছে। বাঘ লোকালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে তা তাড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসী ও বনকর্মীরা।
রাজ্যের বন দপ্তরের প্রধান বিনোদ কুমার যাদব বলেন, জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ভগবতপুরের কুমির প্রকল্পের পাচিল ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় পানির তোড়ে ৮–১০টি ছোট কুমির ভেসে যাওয়ার সময় বনকর্মীরা জাল ফেলে সেগুলো আটকান। তবে বড় কুমির ভেসে গেছে কি না, তা এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বন থেকে ভেসে যাওয়া ৫টি হরিণ ও ১টি বুনো শূকর উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় ১০ কোটি রুপির ত্রাণ পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন কাল শুক্রবার।