নিজস্ব প্রতিবেদক
সামনে কোরবানির ঈদ ঈদুল আজহা। মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় এই উৎসবকে ঘিরে দেশে চলছে নানা প্রস্তুতি। আর পরিবার-পরিজনের জন্য বাড়তি খরচ মেটাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বাড়িয়ে দিয়েছেন রেমিট্যান্স পাঠানো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে (২৫ মে) দেখা যাচ্ছে, চলতি মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) এ অংক বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি। গত বছর গোটা মে মাসে (৩১ দিনে) ২২৫ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদুল আজহা সামনে রেখে সাধারণত গরু, ছাগল ও অন্যান্য কোরবানির পশু কেনা, নতুন পোশাক, উপহার এবং পারিবারিক ব্যয়ের জন্য প্রবাসীরা দেশে বেশি বেশি অর্থ পাঠান। ফলে এ সময় রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যাংক কর্মকর্তাদের আশা, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ শুধু প্রবাসী পরিবারের আয় বাড়ায় না বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখে। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতি যেমন চাঙা হয়, তেমনি নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসে।
এদিকে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। ডিজিটাল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হওয়ায় এখন অনেকেই হুন্ডি এড়িয়ে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে ২২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৭ কোটি ডলার আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার এবং নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার এবং এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
অর্থাৎ বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন এবং মার্চে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৯১২ কোটি মার্কিন ডলার।