তবে এই চলাচল হয়েছে যাত্রীবিহীন উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত চারটি স্টেশনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনের এই চলাচলকে ‘পারফরম্যান্স টেস্ট’ বলা হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, আজ সকালে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা পুরো ব্যবস্থার মূল্যায়ন করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে প্রতিবেদন দেবেন। এর ভিত্তিতে ট্রেন কবে যাত্রীসহ চলাচল করবে, সে সম্পর্কে ঘোষণা দিতে পারেন মন্ত্রী।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এই পথে ১৬টি স্টেশন থাকবে। আজ যে ৪টি স্টেশনের মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচল, সেসব স্টেশন হচ্ছে উত্তরা-উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা-দক্ষিণ ও পল্লবী। এই স্টেশনগুলো পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে ট্রেনের যাত্রা শুরু হবে। উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোটি মাটিতে, মূল লাইন উড়ালপথে।
ঢাকা ও এর আশপাশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানি সূত্র জানায়, পারফরম্যান্স টেস্টের অংশ হিসেবে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। এরপর আস্তে আস্তে ট্রেনের গতি বাড়ানো হবে। ২৫ কিলোমিটার গতির ওপরে ট্রেন চলাচলের পরীক্ষা করা হবে সবার শেষে। এভাবে প্রায় ছয় মাস পারফরম্যান্স টেস্ট করা হবে। মেট্রো ট্রেন পুরোপুরি বিদ্যুচ্চালিত। সংকেত ও যোগাযোগসহ ১৭-১৮টি ব্যবস্থা ট্রেন চলার ক্ষেত্রে কাজ করবে।
পারফরম্যান্স টেস্টের পর হবে মূল পরীক্ষামূলক চলাচল, যা ‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট’ হিসেবে পরিচিত। এ সময় ১৭-১৮টি ব্যবস্থা একসঙ্গে ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা দেখা হবে। পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য স্টেশনসহ সব স্থাপনা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে হবে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত করা হবে। এই পরীক্ষা ছয় মাস বা এর চেয়েও বেশি সময় ধরে হতে পারে। এরপর যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, মেট্রো ট্রেন ও লাইনের নকশা অনুযায়ী, এটি সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। তবে যাত্রী নিয়ে কত গতিতে চলবে, স্টেশনে কতক্ষণ থামানো হবে এবং ভাড়া কত হবে, এসব বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
মেট্রোরেলের ট্রেনের নকশা প্রণয়ন ও তৈরির দায়িত্বে রয়েছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম। ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, ট্রেনটি পরিচালনা করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা জাপানের চালক। তাঁদের প্রকৌশলী-টেকনিশিয়ানরা (কারিগরি কর্মী) তদারক করেন। তাঁদের অধীনেই সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে ট্রেনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবে। তখন বাংলাদেশের নিয়োগ করা চালক ট্রেন চালাবেন। ইতিমধ্যে চালক নিয়োগ দিয়ে তাঁদের দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিদেশেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, গত জুলাই পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার উড়ালপথ নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে জাপান থেকে ২৪ সেট ট্রেন (প্রতি সেটে ৬টি কোচ) কেনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪ সেট ট্রেন উত্তরা ডিপোতে মজুত আছে। আরও ১ সেট জাপান থেকে আসবে শিগগিরই। বাকি ট্রেন সেটের নির্মাণকাজও চলমান আছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় শেষ। আগামী বছরের ডিসেম্বরের দিকে উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর আলোচনা আছে। তবে মতিঝিল পর্যন্ত পুরোটা একসঙ্গে চালুর মতও সরকারের ভেতর আছে। সেটা হলে মেট্রোরেল চালু হতে পারে ২০২৩ সালের জুনের পর। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের জন্য উড়ালপথ নির্মাণের শুরু থেকে যাত্রীসহ চালুর মাঝখানে বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। পরীক্ষামূলক যাত্রা একটি মাইলফলক। এখন বলা যায়, মেট্রোরেল স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ঢাকাবাসী এখন মেট্রোরেল দেখতে পাবে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলেই তারা এই ট্রেনে চড়তে পারবে।
বিএসডি/এমএম