ক্রীড়া ডেস্ক:
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার। তাসকিন আহমেদের আউট সাইড অফের বল বুঝতেই পারেননি ক্রিজে থাকা প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করাম। অল্পের জন্য ইনসাইড এজ থেকে বেঁচে যান এই ব্যাটসম্যান। ব্যাট ফসকে যায় হাত থেকে, আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাসও আটকাতে পারেননি বল, চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। পরের বলেই স্লিপে নাঈম শেখের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন।
আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে সবুজ উইকেটে এভাবেই পেসাররা সহায়তা পেয়েছেন। তাসকিনের এমন বলের পর আক্ষেপ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশ যে উইকেটই বুঝতে পারেনি। সঙ্গে তো আছে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিল। স্কোরবোর্ডে জমা হয়নি লড়াই করার মতো রান। ছোট একটি পরিসংখ্যানে আরও স্পষ্ট হবে। পাওয়ার প্লে-তে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ২৮ রান। আর সমান উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ৩৩ রান।
দ্রুত উইকেট পড়লেও লক্ষ্যে ছোট হওয়ায় জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। অধিনায়ক বাভুমা ২৮ বলে ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। । তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ডেভিড মিলার। ওপেনার রিজা হেনড্রিকস ৪ রানে ফেরেন তাসকিনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই। ১৫ বলে ১৬ রান করে খেলার হাল ধরার চেষ্টা করেও পারেননি কুইন্টন ডি কক। তাকে ফেরান মেহেদী হাসান।
রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন মার্করাম। এরপর বাভুমা-রাসি ফন ডার ডুসেন খেলার হাল ধরেন। তবে ২২ রান করে ফন ডার ডুসেন সাজঘরে ফেরেন জয়ের খুব কাছে গিয়ে। ম্যাচ শেষ করে আসেন বাভুমা-মিলার।
বিব্রতকর ব্যাটিংয়ের সঙ্গে এই হারের অন্যতম কারণ উইকেট বুঝতে না পারা। দিন যায়, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে কোনো উন্নতি হয় না। উল্টো আরো অবনতি। আগে ব্যাটিং হোক কিংবা পরে, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেই ব্যর্থতা। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের চতুর্থ ম্যাচে এই দুর্দশা আগের সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। পাওয়ার প্লের ওভার শেষ না হতেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট, স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৮ রান।
শুধু তাই নয় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট উইকেটও পড়তে পারেনি। আগের দিন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলে দিয়েছিলেন স্পিন নির্ভরতার কথা। সেই হিসেবে একাদশ থেকে কমানো হয়েছে এক পেসারও। কিন্তু খেলা শুরুর পর দেখা যাচ্ছে উল্টো। পিচে দেখা যাচ্ছে ঘাস। পেসাররা দারুণ সহায়তা পাচ্ছেন। সেটি বুঝতে পেরে প্রোটিয়ারা তিন পেসার নিয়েই একাদশ সাজিয়েছে। আর বাংলাদেশ একাদশ থেকে বিশ্রামে রেখেছে মোস্তাফিজুর রহমানকে। তার পরিবর্তে খেলছেন নাসুম আহমেদ।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নিতে ভুল করেননি প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। উইকেটের সুবিধা ভালোভাবেই তুলে নিয়েছেন কাগিসো রাবাদারা। পাওয়ার প্লের মধ্যে বাংলাদেশ তিন উইকেট হারায়, তার তিনটিই তুলে নিয়েছেন কাগিসো রাবাদা।
লিটন-নাঈম ধীরগতিতে ইনিংস শুরু করেছিলেন। ১১ বলে ৯ রান করে নাঈম ফিরলে ভাঙে ২৩ বলে ২২ রানের জুটি। এরপরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখেন। উইকেটে এসেই প্রথম বলে ফেরেন সৌম্য। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় প্রোটিয়ারা। সৌম্যর মতো শূন্য রানে ফেরেন আরো দুই ব্যাটসম্যান। মুশফিকুর রহিম ৩ বল খেলে খুলতে পারেননি রানের খাতা আর আফিফ হোসেন ফেরেন প্রথম বলেই। মাঝে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আউট হন ৯ বলে ৩ রান করে। ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি বিশ্বকাপে অভিষিক্ত শামীম হোসেন। তিনি ২০ বলে ১১ রান করেন।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সঙ্গে আছে টিম ম্যানেজমেন্টের উইকেট না পড়তে পারা। আগের দিন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলে দিয়েছিলেন স্পিন নির্ভরতার কথা। সেই হিসেবে একাদশ থেকে কমানো হয়েছে এক পেসারও। কিন্তু খেলা শুরুর পর দেখা গেছে উল্টো। পিচে দেখা যাচ্ছে ঘাস। পেসাররা দারুণ সহায়তা পাচ্ছেন। সেটি বুঝতে পেরে প্রোটিয়ারা তিন পেসার নিয়েই একাদশ সাজিয়েছে। আর বাংলাদেশ একাদশ থেকে বিশ্রামে রেখেছে মোস্তাফিজুর রহমানকে। তার পরিবর্তে খেলছেন নাসুম আহমেদ। আর সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে এসেছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। কোনো কিছুই কাজে আসেনি।
মাসকট কিংবা আরব আমিরাত। যেখানেই খেলেছে বাংলাদেশ সেখানেই ঢল নেমেছিল প্রবাসী দর্শকদের। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল আজকের ম্যাচটি। দর্শকরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এমন বিব্রতকর পারফরম্যান্সের কারণে। কাল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উন্নতি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, আর কত সময় লাগবে?
বিএসডি/এসএস