ডেস্ক রিপোর্ট,
৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার আওতায় গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে। কারিগরি ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে কাজও। বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যাপক উন্নয়নের কর্মযজ্ঞের সূচনা হয় রেলে। ২০১৬ সালে মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে রেলের উন্নয়নকে আরো সুসংগঠিত করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরে ৪৬টি নতুন রেল ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ), ২৩০টি নতুন ক্যারেজ বা বগি, ১৭৯টি নতুন রেল ব্রিজ, ২৩৬.৮৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ, ২৪৮.৫০ কিলোমিটার রেলপথ মিটারগেজ (এমজি) থেকে ডুয়েল গেজে (ডিজি) রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ১০৬টি নতুন ট্রেন ও ৩০টি ট্রেন সার্ভিস বর্ধিত করা হয়েছে।
নতুন নির্মিত ২৩৬.৮৭ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার, টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার (মেইন লাইন ৬৪ কিলোমিটার ও লুপ লাইন ২২ কিলোমিটার), লাকসাম থেকে চিনকী আস্তানা ৮১ কিলোমিটার (মেইন লাইন ৬১ কি: মি: ও লুপ লাইন ২০ কি: মি:), ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা ১০ কিলোমিটার, ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর ২২ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ড ২.৮৭ কিলোমিটার।
মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হয়েছে ২৪৮.৫০ কিলোমিটার রেললাইন। এরমধ্যে ঢাকা-জয়দেবপুর ৮৫ কিলোমিটার, দিনাজপুর-পঞ্চগড় ১৬ কিলোমিটার এবং পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড় এবং কাঞ্চন-বিরল সেকশন ১৪৭.০৫ কিলোমিটার।
এই সময়ে ১০৯০.৪৩ কিলোমিটার রেলপথ উন্নয়ন/পুনর্বাসন/পুন:নির্মাণ করা হয়েছে। এই পথগুলো হচ্ছে- লালমনিরহাট-বুড়িমারী ৯৫ কিলোমিটার, কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশন ৮২ কিলোমিটার, মেইন লাইন সেকশনসমূহের পুনর্বাসন ৪৯.২৫ কিলোমিটার, সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশন ৬২ কিলোমিটার, পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা ৩৯.০৫ কিলোমিটার, রাজশাহী-রোহনপুর ৯২ কিলোমিটার, ঢাকা-নারায়নগঞ্জ ২০.৮ কিলোমিটার, গৌরিপুর-জারিয়া ঝাঞ্জাইল ৭৮.৬৪ কিলোমিটার, ফৌজদাহাট-সিজিপিওয়াই ৩৭.৫০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহ-জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার ১০৪.৮৭ কিলোমিটার ও ষোলশহর-নাজিরহাট সেকশন ৫৭.৮৯ কিলোমিটার।
এছাড়া তিস্তা-রমনা বাজার ৪৮ কিলোমিটার, লাকসাম-চাঁদপুর ৫১ কিলোমিটার, সৈয়দপুর ওয়ার্কসপ ১৮ কিলোমিটার, পোড়াদহ-গোয়ালন্দ ২১ কিলোমিটার, চিনকি আস্তাানা-আশুগঞ্জ ১৯৮ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ড ১১ কিলোমিটার, পাহাড়তলী ওয়ার্কসপ ৪.৮০ কিলোমিটার ও দর্শনা-ঈশ্বরদী ১৯.৬৩ কিলোমিটার রেলপথ উন্নয়ন/পুনর্বাসন/পুন:নির্মাণ করা হয়েছে।
নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে ৬৭টি। এছাড়া ১৬০টি স্টেশন বিল্ডিং উন্নয়ন/পুনর্বাসন/পুন:নির্মাণ করা হয়। নতুন রেল ব্রিজ নির্মিত হয়েছে ১৭৯টি। আর ৫৯৭টি রেল ব্রিজ পুনঃনির্মাণ করা হয়। ৭ বছরে লোকোমোটিভ সংগ্রহ করা হয়েছে মোট ৪৬টি। এরমধ্যে মিটারগেজ (এমজি) ২০টি ও ব্রডগেজ (বিজি) ২৬টি। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ ) সংগ্রহ করা হয়েছে ২০টি।
ক্যারেজ বা বগি সংযুক্ত হয়েছে ২৩০টি। এরমধ্যে ১৩০টি ব্রডগেজ ও ১০০টি মিটারগেজ। ক্যারেজ পুনর্বাসন করা হয়েছে ২৮৮টি। এরমধ্যে ২১৪টি মিটারগেজ ও ৭৪টি ব্রডগেজ। রেলওয়াগন সংগ্রহ করা হয়েছে ৫১৬টি। এরমধ্যে ২৭০টি এমজি ফ্ল্যাট, ১৬৫টি বিজি ট্যাংক ও ৮১টি এমজি ট্যাংক। এছাড়া ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে ৩০টি। পুনর্বাসন করা হয়েছে ২৭৭টি রেলওয়াগন।
৭ বছরে রেলের ৫৯টি রেল স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন করা হয়েছে। কালুখালী থেকে ভাটিয়াপাড়া পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুনর্বাসন করা হয়েছে। নতুর ট্রেন চালু করা হয়েছে ১০৬টি। ৩০টি ট্রেন সার্ভিস বর্ধিত করা হয়েছে এই সময়ে। ডুয়েল গেজের জন্য একটি হুইল লেদ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সংগ্রহ করা হয়েছে দুইটি ক্রেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুইটি লোড মনিটরিং ডিভাইস সংগ্রহ করা হয়েছে এই সময়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে মোট ২৯১০.২ কিলোমিটার রুট রয়েছে। এরমধ্যে মিটারগেজ রেলপথ ১৬৫৬.১৭ কিলোমিটার, ব্রডগেজ ৭১৮.৮৪ কিলোমিটার এবং ডুয়েলগেজ (মিটারগেজ ও ব্রডগেজ) ৫৩৫.১৯ কিলোমিটার। রেলে বর্তমানে ইন্টারসিটি ট্রেন আছে ৮৬টি, লোকাল, মিক্সড ও পিএন্ডভি ট্রেন ১২৬টি, মেইল, এক্সপ্রেস, কমিউটার ও ডেমু ট্রেন আছে ১৩২টি এবং মৈত্রী ট্রেন ২টি। মোট ট্রেনের সংখ্যা ৩৪৮টি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করতে প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। কাজগুলো সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হলে এ সেক্টরের চেহারা বদলে যাবে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশে উন্নত রেল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতাও প্রয়োজন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, রেলের উন্নয়নের জন্য ২০১৬ থেকে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা বা মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছি। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের রেলপথের চেহারা বদলে যাবে।
বিএসডি/আইপি