নিজস্ব প্রতিবেদক
৩৯তম জাতীয় ব্যাডমিন্টনে সমাপনী দিনটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শাটলার নাছিমা নাহারের। তিন ইভেন্টেই তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়ে ত্রিমুকুট জিতেছেন।
শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে বেশ উচ্ছ্বাস ঝরল নাছিমার কন্ঠে, ‘এবারই প্রথমবার এককে চ্যাম্পিয়ন হলাম। গতবার তিন ইভেন্টেই রানার্স আপ হয়েছিলাম। এবার তিন ইভেন্টে প্রথম হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।’
নারী এককে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন উর্মি আক্তার। এবার উর্মির ভাগ্যসুপ্রসন্ন হয়নি। তিন ইভেন্টেই তিনি ফাইনালে হেরেছেন। এককে উর্মির কাছে, নারী দ্বৈতে উর্মি-রেশমা জুটির কাছে ও মিশ্র দ্বৈতে সিফাত উল্লাহ ও নাছিমার কাছে। তিন বারই উর্মিকে হারানো সম্পর্কে নাছিমা বলেন, ‘আমি এবার অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই পরিশ্রমেরই ফসল হয়তো।’
বগুড়ায় এইচএসসিতে পড়ছেন নাছিমা। পরিবারের মধ্যে তিনিই প্রথম ক্রীড়াঙ্গনে এসেছেন। ব্যাডমিন্টনে আসার গল্প বললেন এভাবে, ‘আমার স্কুলের শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ব্যাডমিন্টনে আসা। স্কুল, জেলার গন্ডি পেরিয়ে এখন জাতীয় পর্যায়ে। আমার ছোট বোনও ব্যাডমিন্টন খেলে।’
ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়রা ফেডারেশন থেকে আর্থিকভাবে তেমন সহায়তা পান না। পুরুষ খেলোয়াড়রা শীতকালীন সময়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে অনেক অর্থ আয় করে। নারীদের সেই সুযোগ নেই। এ নিয়ে ত্রিমুকুট জয়ী নাছিমার আক্ষেপ, ‘এই অনুরোধটা আমাদের ফেডারেশনের কাছে সব সময়ই থাকে যেহেতু আমাদের খেলার সুযোগ কম ফলে ফেডারেশন যদি খেলা বৃদ্ধি করে তখন একটা আয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়।’
ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন এবার প্রাইজমানি বৃদ্ধি করেছে। এরপরও নারী-পুরুষে খানিকটা ব্যবধান রয়েছে। নারী এককের চ্যাম্পিয়ন এক লাখ টাকা পেলেও পুরুষ এককে সেটা দেড় লাখ। খানিকটা বৈষম্য হলেও মেনে নিচ্ছেন নাছিমা, ‘একটু তো খারাপ লাগেই এরপরও ওদের (পুরুষ) বেশি এফোর্ট দিতে হয় ঠিক আছে।’
উর্মি আক্তারের নারী এককে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়রা সুযোগ ছিল। উর্মি সেই সুযোগ মিস করলেও পুরুষ এককে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন আব্দুস সোয়াদ। জুমারকে সরাসরি ২-০ সেটে হারিয়ে সোয়াদ। প্রথম সেটে ২১-১৪ ও দ্বিতীয় সেটে ২১-০৪ পয়েন্টে জেতেন। ফাইনাল এক পেশে হলেও প্রতিযোগিতার মান ভালোই দেখছেন সোয়াদ, ‘গতবারের চেয়ে এবার বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। খেলার মানও খানিকটা বেড়েছে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নের জন্য আমি অনেক দিন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি।’ পুরুষ দ্বৈতে নাঈম-মিজান জুটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অহিদুল-রাইদ জুটিকে হারিয়ে। ৩৯ তম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে দলগতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বাধিক পদক পাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করল। বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রাইজমানি বেশি। ফেডারেশনের সামনের পরিকল্পনা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক রাসেল কবির সুমন বলেন, ‘আমরা শীঘ্রই এসএ গেমসের জন্য ক্যাম্প শুরু করব। ইন্দোনেশিয়ার কোচ আমাদের শাটলারদের অনুশীলন করাবে। সামনের মাসে থাইল্যান্ডে টুর্নামেন্টে রয়েছে সেখানে আমরা শাটলারদের সহায়তা করব।’
জাতীয় ব্যাডমিন্টনে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দিতে গিয়ে অন্য খেলাগুলোকে বিগত সময় নজরই দেয়নি। ব্যাডমিন্টন একটি জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় খেলা। এই খেলার সুযোগ সুবিধা অনেক অপ্রতুল। আমরা চেষ্টা করব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার।’