লাইফস্টাইল ডেস্ক,
ইউনেস্কোর তথ্যমতে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৯০ হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে পড়ালেখা করতে যান। তার মধ্যে অনেকেই দেশে ফেরত আসতে চান না, তার পিছনে বিভিন্ন আছে। তবে, একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশে সুযোগের অভাব।
২০১৫ সালে মালয়েশিয়াতে পাড়ি জমান শারমিন রহমান। পড়াশোনার পরে উনি সেখানে নিজের ব্যবসা শুরু করেন এবং বর্তমানে আকুরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এছাড়া উনি মালদ্বীপের রিসোর্টের সাথে, মালয়েশিয়া,বাংলাদেশ,চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন।
বয়স কম হওয়া কোন প্রতিবন্ধকতা হতে পারে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বয়স কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়।”
“বয়স কম না বেশি তাতে কিছু আসে যায় না,যেটা বড় ব্যাপার সেটা হচ্ছে আপনি কতটা পরিশ্রম করছেন। কতটা নতুন নতুন জিনিসের উপর আপনার আগ্রহ এবং সেটা শেখার জন্য আপনি কতটা ত্যাগ করতে রাজি আছেন। অনেক সময় নিজের বিনোদনের সময়টুকু ছাড় দিতে হয়, অনেক সময় নিজের বিশ্রামের সময়টুকু ছাড় দিতে হয়।”
কাজের পেছনে,নতুন পরিকল্পনার পিছনে ব্যয় করতে হয় অনেক সময় এবং কঠোর পরিশ্রম।যদি লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে বয়স আসলে কোন প্রভাবক না।তবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে বয়স নিয়ে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন তিনি হয়েছেন, “তুমিতো পিচ্চি মেয়ে তুমি ব্যবসার কতটুকু বুঝবা? আমি ৪০/৫০ বছর যাবত এই ইন্ডাস্ট্রিতে আছি আসলে তোমার আইডিয়াটা কার্যকর হবে না”।এই ধরনের কথাবার্তা শুনেছেন বহু মানুষের কাছে। আবার একই সাথে বিভিন্ন মানুষ সাপোর্ট করেছেন, উৎসাহিত করেছেন এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন এবং গাইডলাইন দিয়েছেন কিভাবে আরো ভালো করা যায়।
“আমি সবসময় শিখতে চাই এবং শেখার কোন শেষ নাই,শেখার কোন বয়স নাই। আপনি ২০ বছর বয়সেও শিখতে পারেন, আপনি ৬০বছর বয়স শিখতে পারেন। শুধু আপনার অভিজ্ঞতার সাথে সাথে, শেখার ধরণটি পরিবর্তন হয়, তবে আপনার ভ্রমণ চলতে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিবন্ধকতা সামনে আসবেই সেটা বয়স নিয়ে হতে পারে, সেটা আপনার আর্থিক অবস্থার কারণে হতে পারে। আপনার যদি নেটওয়ার্ক ভালো থাকে তাহলে, আপনার প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই কম হবে। আর আপনার যদি নেটওয়ার্ক না থাকে এবং আপনার পারিবারিক সাপোর্ট না থাকে, তাহলে আপনার শুরুটা খুব কঠিন হবে। কিন্তু এগুলো আসলে পার করা সম্ভব। “আর আজকাল শেখাটা খুবই সহজ হয়ে গেছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বিভিন্ন আর্টিকেল পড়তে পারেন,বিভিন্ন কেস স্টাডি পড়তে পারেন। আপনি ইউটিউব ডকুমেন্টারি থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারেন। আমার সবচাইতে ভাল লাগে বিভিন্ন সফল মানুষের ইন্টারভিউ দেখতে। কারণ সেখান থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। একজন মানুষের সফলতার পিছনে অনেক ব্যথা, অনেক আঘাত, অনেক ধরনের কথাবার্তা থাকে। অনেক ধরনের সংগ্রাম থাকে সেটা সম্পর্কে জানলে অনুপ্রেরণাটা পাওয়া সহজ হয়।”
বাংলাদেশে এখন নতুন উদ্যোক্তাদের অনেক উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অনেক ধরনের ফান্ডিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেটা আগে একদমই ছিলনা। নতুন নতুন সুযোগ আসছে এবং সামনে আরো হবে।কিন্তু একই সাথে কর্পোরেট জগতে হোক আর ব্যবসা জগতে হোক নতুন কোন কিছু যারা শুরু করেন তাদেরকে সবারই উৎসাহ দেওয়া উচিত। সবারই সামনে আগানোর জন্য অনুপ্রেরণা দেয়া উচিত। তাদেরকে কখনোই ছোট করে দেখানো উচিত নয়। তাদের কর্মদক্ষতা যদি ভালো হয়ে থাকে, তাহলে তাদেরকে কখনোই নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়।
মেয়েরা যখন ব্যবসায় এগিয়ে আসে এবং যখন কিছুটা করে দেখানোর মতো একটা জায়গায় পৌঁছায় তখন সে ক্ষেত্রে অনেকেই ঋনাত্নক মন্তব্য করতে পছন্দ করেন। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় কারণ পুরুষের তুলনায় খুব কমই সফল নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। মানুষ এখনও এটা দেখে অভ্যস্ত হতে পারেনি, সফল নারী ব্যবসায়ী সংখ্যায় যত বৃদ্ধি পাবেন, ততো এই দুর্বিসহ মন্তব্যগুলো কমে যাবে।
পরিশ্রম করার সাথে সাথে সঠিক পরিকল্পনা,রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং দূরদর্শিতা থাকা জরুরি।
বিএসডি/আইপি