আন্তর্জাতিক ডেস্ক
একসময় ইসলামি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। পাশাপাশি, অতীতে পাকিস্তানের সঙ্গে যে সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল— সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি দায়ী করেছেন তিনি।
রোববার রাজধানী ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসির পাকিস্তান প্রতিনিধি আজাদেহ মোশিরি। মন্ত্রীর উদ্দেশে বিবিসির প্রথম প্রশ্ন ছিল— ভারত ও পাকিস্তানভিত্তিক বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এবং এসব গোষ্ঠীর নেতারা পাকিস্তানে সক্রিয়তা বা তৎপরতা চালাচ্ছেন কিনা। উত্তরে খাজা আসিফ বলেন, “না, এমন কোনো ব্যাপার পাকিস্তানে নেই।”
এর পর আজাদেহ মোশিরি তার কাছে জানতে চান যে ২০১৬ সালে কাশ্মিরের উরি এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই মোহাম্মদকে পাকিস্তান এখনও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে যে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র— এ ব্যাপারে পাকিস্তানের কোনো মন্তব্য রয়েছে কি না।
জবাবে খাজা আসিফ জানান, গত শতকের আশির দশকে সোভিয়েত-আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় সোভিয়েত বাহিনীকে পরাজিত করতে কিছু ‘মুজাহিদিন বাহিনী’ গড়ে তোলা হয়েছিল। এদেরকে অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দিতো যুক্তরাষ্ট্র এবং এদের প্রশিক্ষণ হতো পাকিস্তানে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় আছে, সেগুলো মূলত সেসব মুজাহিদিন বাহিনীরই উত্তরসূরী।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “এসব (সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদ) আসলে আমাদের অতীত। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে, গত শতকের আশির দশকে এরা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। এ ব্যাপারটি আমাদের সব সময় তাড়া করে ফেরে….এক সময় যারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের মিত্র ছিল কিংবা বলা যায় আমরা যাদের মিত্র ছিলাম— তারা এখন পুরোপুরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর আমরা নোংরা। নিজেদের সাবেক মিত্রদের কর্মকাণ্ডের জন্য তারা এখন আমাদের দোষ দিচ্ছে।”
“পাকিস্তানে এখন কোনো জঙ্গি নেতা নেই। এটা ঠিক যে তাদের অনেকেই বেঁচে আছে, এখনও মারা যায়নি, তবে তারা পাকিস্তানের ভেতরে বা অন্য কোনো দেশে কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে আর সংশ্লিষ্ট নেই।”
এর আগে গত মাসে যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন চ্যানেল স্কাই টিভিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন খাজা আসিফ। সেখানে ‘পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, সেসম্পর্কে তার মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল।
জবাবে তিনি বলেছিলেন, “এটি একটি নোংরা কাজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গত ৩০ বছর ধরে আমরা এটা করে যাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।
এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৫৭ জন।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করল পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানি উল মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।
এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। শনিবার থেকে কার্যকর হয় এই যুদ্ধবিরতি।