আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়া থেকে পশ্চিমা দেশগুলো এরই মধ্যে গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণে তারা বিকল্প উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের দাম বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় বাড়ছে কয়লার চাহিদা। চলতি বছর এই জ্বালানির বৈশ্বিক চাহিদা কিছুটা বেড়ে এক দশকের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।কয়লার বাজারবিষয়ক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, চলতি বছর কয়লার বৈশ্বিক ব্যবহার দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে। ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০০ কোটি টনে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো শ্লথ হয়ে পড়েছে চীনের অর্থনীতির চাকা। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতি বদলাবে। অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি কয়লার চাহিদা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। ২০১৩ সালের রেকর্ড স্পর্শ করবে কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা। আগামী বছর চাহিদা আরও বেড়ে অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আইইএ।
তথ্য বলছে, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে স্থবির হয়ে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। এ পরিস্থিতিতে তলানিতে নামে কয়লার চাহিদা ও ব্যবহার। তবে গত বছর থেকে মহামারীর প্রভাব শিথিল হতে থাকায় অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার শুরু হয়। ফলে ওই বছর কয়লার ব্যবহারও বাড়ে প্রায় ৬ শতাংশ।
কয়লা সবচেয়ে বেশি দূষণযোগ্য জ্বালানি। এটির ব্যবহার বাড়তে থাকায় জলবায়ুতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। গত বছর বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ এক বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে। কয়লার ব্যবহার যে হারে বাড়ছে, তাতে উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আসন্ন শীত মৌসুমে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা প্রকট আকার ধারণ করবে। এ সময় রাশিয়া ওই অঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। এ আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে গ্যাসের দাম। এ পরিস্থিতিতে অনেক দেশই গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কয়লার ব্যবহার বাড়াচ্ছে।
আইইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায় ভারতে কয়লার চাহিদা ৭ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইউরোপেও চাহিদা বাড়বে ৭ শতাংশ হারে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনে কয়লার চাহিদা ৩ শতাংশ কমেছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে চাহিদা আবারো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে বন্ধের পথে থাকা কয়লা খনিগুলো পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে ইউরোপ। কার্যক্রম পরিচালনার সময়ও বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। কয়লার বৈশ্বিক ব্যবহারের ৫ শতাংশ আসে ইউরোপ থেকে। তবে এ হার আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএসডি/ফয়সাল