জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নে ৫নং চর উওর উস্তম আলী মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সব কার্যক্রম চলছে শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের হাতে। কারণ বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর কেউ নেই। বিদ্যালয়ের তালা খোলা থেকে শুরু করে পাঠদান সবই একাই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাধন শিক্ষক শাহ জামাল।
প্রতিদিন তিনি একাই ২০টি ক্লাস নেন। বিদ্যালয়টি চরাঞ্চল এলাকায় হওয়ায় কোনো শিক্ষক আসতে চান না। তাই গত এক বছর ধরে ৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিরব বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ ও দুটি শ্রেণির কক্ষ তালাবদ্ধ। তবে একটি শ্রেণিকক্ষ খোলা রয়েছে। সেই শ্রেণিকক্ষের ভেতর ঢুকতেই দেখা যায় ১০ জন শিক্ষার্থী ও প্রধান শিক্ষককে। এক শ্রেণিকক্ষেই তৃতীয় শ্রেণির চার শিক্ষার্থী, চতুর্থ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী ও পঞ্চম শ্রেণির চার শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পাঠদান দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল। এই তিন ক্লাসের শিক্ষার্থীরা এক শ্রেণিকক্ষে পাশাপাশি বসে ক্লাস করে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল ও আরেকজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সহকারী শিক্ষক বদলি হয়ে চলে যান। এরপরে বিদ্যালয়ে আর কোনো সহকারী শিক্ষক আসেনি। ৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ে খাতা কলমে ছয়টি শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৭২ জন। তাদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১০ জন শিক্ষার্থী, প্রথম শ্রেণিতে ১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
এ বিদ্যালয় নিয়ে স্থানীয়রা জানান, গত এক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল ছাড়া বিদ্যালয়টিতে আর কোনো শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক একাই স্কুলের সব কাজ করেন। এ স্কুলটি চর এলাকায়। স্কুলে আসার রাস্তাঘাট একদমই খারাপ। কোনো শিক্ষক স্কুলে আসতে চান না কাঁচা রাস্তা দেখে। বর্ষার সময় পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না। তাই কোনো শিক্ষকও এই স্কুলে চাকরি করতে চান না।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. শরিফ বলে, আমাদের একজন স্যার আছে, আর কোনো স্যার নেই। তিনি একাই আমাদের সব ক্লাস নেন। আগে ছাত্র-ছাত্রী বেশি ছিল, স্যার নেই দেইখা সব অন্য স্কুলে চলে গেছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আল সাফি বলে, আমাদের ক্লাসে আমরা দুইজন ছাত্রছাত্রী আজ স্কুলে আইছি। ক্লাস থ্রি, ফোর ফাইভ সবার এক সঙ্গে ক্লাস নেন স্যার।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার আগে শিক্ষকেরা স্কুল দেখে আর আসতে চান না। কারণ স্কুলে আসার রাস্তাঘাট খুব খারাপ। স্কুলটি চর অঞ্চলে হওয়ায় কোনো শিক্ষকই এই স্কুলে আসতে চান না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ জামাল বলেন, খুব কষ্টে রয়েছি। বিদ্যালয়ে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমার একাই সব কাজ করতে হয়। ২০১৭ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তখন দুইজন শিক্ষক ছিলাম। ২০২২ সালের শেষের দিকে একজন শিক্ষক বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে যান। তারপর থেকে আমি একাই রয়েছি। প্রতিদিন আমার একাই ক্লাস নিতে হয়। এদিকে শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকেরা আসতে চান না মূল কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ে আসার রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। এ বিদ্যালয়টি চর অঞ্চল এলাকায়। বর্ষার সময় পায়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। এসময় মোটরসাইকেল দিয়ে কোনরকম আসা যায় এছাড়া কোন গাড়ি-ঘোড়া চলে না। বর্তমানে রাস্তার দুই পাশেই ভুট্টা ক্ষেত। রাস্তা দিয়ে একা আসাও ভীতিকর।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী চকদার বলেন, আমি নতুন এসেছি। পরে বিষয়টি জেনেছি। দুই একদিনের মধ্যেই
ডেপুটেশনে আমরা ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিয়ে দেব।
জামালপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন, এই বিষয় নিয়ে আমি না জেনে কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে হবে।
বিএসডি / এলএম