নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় মাসখানেক ধরে চলা অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য সয়াবিন তেলের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এতদিন খুচরা বাজারে পরিমাণে কম এবং ছোট বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও রোজার ঠিক আগে সেটিও উধাও হয়ে গেছে। পাড়া-মহল্লার দোকান কিংবা খুচরা বাজারের অধিকাংশটিতেই একেবারেই ব্ল্যাকআউট বোতলজাত সয়াবিন তেল। কালেভদ্রে বিভিন্ন দোকানে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা ১-২ লিটার কিংবা ৫০০ মিলিলিটারের ছোট বোতল মিলছে। তবে প্রচলিত কোম্পানির ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল একেবারেই উধাও হয়ে গেছে।
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, উত্তরার আজমপুর কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল দৃশ্যমান নেই। বোতলজাত তেল চাইলে তারা ক্রেতাদের না করে দিচ্ছেন। তবে খোলা তেল ও পাম অয়েলের পর্যাপ্ত মজুদ দোকানগুলোতে দেখা গেছে। আবার অনেক দোকানে প্রচলিত সয়াবিন তেলের কোম্পানির অনুপস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে বোতলজাত করা বিভিন্ন নামের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা গেছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ দোকানি।
তিনি বলেন, এমন কি হয়ে গেল যে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই চলমান সংকট সমাধান করা গেল না। এছাড়া ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়েও তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আমরা খুচরা বিক্রেতারা পর্যাপ্ত পণ্য পাচ্ছি না।
আব্দুল হামিদ নামে আরেক দোকানি বলেন, কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না। আবার তেল চাইলে তেল, ময়দা, আটা, সুজির বস্তা নিতে বলছেন। এই সুযোগে কেউ কেউ খোলা তেল বোতলে ভরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামে বিক্রি করছেন।
এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, সরকারের বাজার তদারকির ঘাটতির কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন এবং তেলের সরবরাহ সীমিত রাখছেন। এই সংকট নিরসনে দ্রুত বাজার মনিটরিং, কৃত্রিম সংকট তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করছেন তারা।
শহীদুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজায় ভাজাপোড়া খাবার তৈরিসহ বিভিন্ন কারণে সয়াবিন তেলের প্রয়োজনীয়তা বেশি হয়। কিন্তু দোকান ঘুরেও বোতলজাত তেল পাইনি। শেষ পর্যন্ত কয়েক দোকান ঘুরে ২ লিটারের ১টি বোতল পেয়েছি।
সায়মা নাহার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সয়াবিন তেলের এই সংকট গত মাসেই শুরু হয়েছে। এটি এখনও নিরসন হয়নি। কিন্তু দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যাতে রমজান মাসে ভোক্তারা স্বস্তিতে থাকতে পারেন।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এস নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, আমাদের উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছিলেন যে এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সমাধান হয়নি। এখন পারস্পরিক দোষারোপ চলছে। এগুলো করেই সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি করা হয়েছে। সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল, সেটি গ্রহণ করতে পারেনি। যা ভোক্তাদের জন্য বাড়তি কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।