আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বৈশ্বিক পরাশক্তি চীনের পক্ষ থেকে ‘গুরুতর সামরিক হুমকির’ আশঙ্কার কথা সামনে এনেছে তাইওয়ান। দেশটির দাবি, তাইওয়ানের প্রধান প্রধান বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলো অবরোধ করতে পারে চীনের সামরিক বাহিনী। তাইওয়ান উপত্যকা নিয়ে নিজেদের সর্বশেষ মূল্যায়নে মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই আশঙ্কার কথা সামনে এনেছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চীন বার বার তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করে আসছে দ্বীপটি।
অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। আর তাই চলমান উত্তেজনার মধ্যেই গত অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি অক্টোবরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) বারবার লঙ্ঘন করেছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।
এমনকি সোমবারও ১৬টি চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশ সীমায় (এডিআইজেড) ঢোকে। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এই ঘটনাসহ সম্প্রতি মোট ১৫০টি চীনা যুদ্ধবিমান এডিআইজেডে প্রবেশ করেছে।
রয়টার্স বলছে, প্রতি দুই বছর অন্তর একটি করে রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন কার্যত এই অঞ্চলে যুদ্ধকালীন অবস্থার সূচনা করেছে। রিপোর্টে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ‘গ্রে জোন’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। যার অর্থ- যুদ্ধ ও স্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যবর্তী অবস্থা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের আগস্টের শেষ পর্যন্ত এই এক বছরে চীনা যুদ্ধবিমানগুলো ৫৫৪ বার তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোনে (এডিআইজেড) ‘অনুপ্রবেশ’ করেছে।
দেশটির দাবি, ‘এই একই সময়ে ২০৩৫ সালের মধ্যে নিজেদের আধুনিকায়ন সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। মূলত তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য সামরিক অভিযানে নিজেদেরকে এগিয়ে রাখতেই এই লক্ষ্য নিয়েছে তারা। একইসঙ্গে বিদেশি বাহিনী ও শক্তিকে উপেক্ষা করার শক্তি অর্জনও পিএলএ’র লক্ষ্য। এটি তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তায় গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
মন্ত্রণালয়ের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে তাইওয়ানের প্রধান প্রধান বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বহির্গামী ফ্লাইট রুটগুলো একসঙ্গে অবরোধ করার মতো সক্ষমতা রয়েছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র। এর মাধ্যমে বেইজিং আকাশপথে এবং সমুদ্রপথে তাইওয়ানকে অবরুদ্ধ করতে চায় এবং আমাদের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে চায়।’
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।