মুছা মল্লিক
চীনের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন সিনোফার্মা গ্রহীতাদের ওমরাহ পালনে জটিলতা এখনো কাটেনি। এনিয়ে সংশ্লিষ্টরা বিপরীতমুখি কথা বলছেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওমরাহ পালনে সিনোফার্মার জটিলতার অবসান হয়েছে। বুস্টার টিকা গ্রহনের প্রয়োজন নেই। হজ্জ অ্যাসোসিয়েশন
অব বাংলাদেশের (হাব) বলছে, সৌদি আরবের শর্তানুযায়ী সিনোফার্মার টিকা গ্রহনকারীদের বুস্টার টিকা গ্রহন করা ছাড়া সৌদি আরব যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
যারা বলছেন, সিনোফার্মার টিকা গ্রহনকারীরা বুস্টার টিকা গ্রহন ছাড়াই সৌদি আরবে যেতে পারবেন। তারা মূল বিষয়টা জানেন না। এদিকে করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ বিরতির পর গত ১০ আগষ্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে বিদেশীদের জন্য ওমরাহ চালু হলেও বাংলাদেশ থেকে এখনো একজন যাত্রীও ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যেতে পারেননি। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আগ্রহীরা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী গত ১ সেপ্টেম্বর তার মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ সিনোফার্ম অ্যাকসেপ্ট করছে। যখন সিনোর্ফাম অনুমোদন দেয়নি তখন ছিল বুস্টার
ডোজের কথা। কিন্তু যে মুহূর্তে সিনোর্ফাম অনুমোদন দিয়েছে তখনতো বুস্টার ডোজের প্রশ্ন আসে না।
প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর এমন বক্তবের বিষয়ে জানতে চাইলে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রতিবেদককে বলেন, সিনোফার্মার ভ্যাকসিন নিয়ে কেউ সৌদি আরবে যেতে পারবে না। তিনি বলেন, সৌদি আরব সিনোফার্মার টিকা অ্যাকসেপ্ট করেছে, তবে শর্ত হচ্ছে বুস্টার টিকা
গ্রহন করতে হবে। আর বুস্টার টিকার বিষয়ে ওয়াল্ড হেলথ অরগাসাইজেশন আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের দেশের মানুষ স্বাভাবিক দুটি টিকাই পাননি। দেশে বুস্টার টিকা দেওয়া হবে কিনা এসব অনেক সময়ের ব্যাপার।
হাব নেতৃবৃন্দ বলছেন, ওমরাহ পালনের অনুমতি ও চালু হওয়ার খবরে আনন্দ ও স্বস্তি প্রকাশ করলেও টিকা জটিলতার কারণে ঝামেলার শেষ হচ্ছে না। আগ্রহীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
তারা বলছেন, দেশেব্যাপকহারে সিনোফার্মার টিকা দেওয়া হচ্ছে। বুস্টার টিকা না পাওয়ায় সিনোফার্মার টিকা গ্রহনকারীদের ওমরাহ জটিলতা কাটছে না। তবে, সৌদি আরবের শর্তানুযায়ী যারা মডার্না, ফাইজার, অ্যাস্ট্রেজেনেকা ও জনসনের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের খুব শিগগিরই ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে পাঠাতে পারবেন। করোনার কারণে সৌদি আরবের শর্ত পূরণ করে ওমরাহ পালনে সর্বনিম্ন দেড় লাখ টাকা খরচ পড়বে। করোনার আগে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ওমরাহ পালন করতে যেতেন। তখন এজেন্সি ভেদে এবং হোটেলের মান অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকা খরচ হতো।
১৪৪২ হিজরির পবিত্র হজ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ২৫ জুলাই থেকে ওমরাহ পালন শুরু হয়। প্রথমে শুধু সৌদি আরবে অবস্থানরতরা ওমরাহ পালনের সুযোগ পান। পরে ১০ আগস্ট থেকে বিদেশিদের জন্য ওমরাহ পালনের অনুমতি দেয় সৌদি সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ আগস্ট নাইজেরিয়া থেকে ওমরাহ পালনে প্রথম দলটি সৌদি আরব এসে পৌঁছে। জেদ্দা বিমানবন্দরে তাদের গোলাপ ফুল, জমজমের পানি ও খেজুর দিয়ে স্বাগত জানায় সৌদি র্কর্তৃপক্ষ। এরপর ওমান ও ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের যাত্রীরাও ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব পৌঁছেছেন। করোনারোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ওমরাহ যাত্রীদের চলাচল ও আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৌদি র্কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে‘ইতামারনা’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সাপেক্ষে ওমরাহ সম্পন্ন করতে হয়। বিদেশি কোনো যাত্রী একবার ওমরাহ পালনের পর তিনদিন আর নিবন্ধন করার সুযোগ পান না। তবে মসজিদে হারামে নামাজ আদায় এবং মসজিদে হারামের দুই-তিন তলা দিয়ে নফল তওয়াফ করতে পারবেন।
বিএসডি/এমএম