নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন প্রতিদিনই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এরই মধ্যে রোববার এবং সোমবার দুই দিনে সাড়ে ১৯ মেট্রিক টন ইলিশ এসেছে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।
বেশির ভাগই মাঝারি সাইজের ইলিশ। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও দাম কিন্তু এখনো নাগালের বাইরে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। আর ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এছাড়াও বড় সাইজের বিশেষ করে দেড় কেজি বা আরও বেশি ওজনের ইলিশের দাম ১৪০০- ১৫০০ টাকা।
কক্সবাজার বাহারছড়া বাজারের মাছ রুহুল আমিন জানান, মাছ ধরা পড়ছে ঠিকআছে কিন্তু দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকাতে ইলিশের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। যে কারণে দামও একটু চড়া। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমবে বলে ধারণা করেন এই ব্যবসায়ী।
শহবের বইল্ল্যাপাড়ার বাসিন্দা অশোক কুমার বড়ুয়া বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখছি, রোববার থেকে কক্সবাজারে ইলিশ ধরা পড়ার হিড়িক পড়েছে। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি কেজিতে চারটি ধরে এ রকম ছোট সাইজের ইলিশের দামও ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ টাকা।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার আহসানুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথমদিনে সাড়ে ১৬ টন মাছ এসেছে। আশা ছিল সোমবার আরও বেশি মাছ আসবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সোমবার ইলিশসহ মাছ এসেছে সাড়ে ১৫ টন। এরমধ্যে ইলিশ হলো সাড়ে সাত টন।
তিনি বলেন, দুই দিনে ইলিশ এসেছে সাড়ে ১৯ টন। প্রথম দিন প্রায় ইলিশের ওজন ছিল ৬০০-৭০০ গ্রাম। কিন্তু সোমবার পাওয়া ইলিশের ওজন ৮০০ থেকে ১৫০০ গ্রাম। জানান তিনি। কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, দুই মাস ৫দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেও কক্সবাজার উপকূলে ইলিশের দেখা পাননি জেলেরা।
সোমবার বড় ইলিশ ধরা পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলায় ছোট-বড় মাছ ধরা ট্রলার আছে প্রায় ছয় হাজার। এসব ট্রলার নিয়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জেলে-শ্রমিক সাগরে গেছেন। আশা করছি এবার বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে জালে। সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম শেষে তিনদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের খোঁজে ছুটছে কয়েক হাজার ট্রলার। গত শনিবার মধ্য রাতের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন ঘাট থেকে প্রায় ৭ হাজার ছোট-বড় ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে। এতে মাছের উৎপাদন ও আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞায় সাময়িকভাবে জেলে ও ট্রলার মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মূলত তারাই এর সুফল ভোগ করছে। কারণ সাগরে এখন ইলিশ ও অন্যান্য মাছ আকারে যেমন বড় হচ্ছে, তেমনি উৎপাদনও বাড়ছে।
বিএসডি/ফয়সাল