স্টাফ রিপোর্টার
‘প্রকৃত সমালোচকের’ অভাব বোধ করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত সাত বছরে একবারও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি তিনি। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদি কখনোই সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। সমালোচনার কারণে অপ্রিয় প্রশ্ন শুনে সাক্ষাৎকার থেকে উঠেও গিয়েছেন তিনি।
রোববার (৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, বিরোধীদের কটাক্ষ, অপ্রিয় প্রশ্ন বা সমালোচনা শোনার ভয়েই গত সাত বছরে একটি বারও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি নরেন্দ্র মোদি। তার বদলে কিছু ‘ঘনিষ্ঠ’ সংবাদমাধ্যমে বসে বাছাই করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
তবে মোদি দাবি করেছেন, তিনি প্রকৃত সমালোচকের অভাব বোধ করছেন। শনিবার একটি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে তার দাবি, তিনি সমালোচনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন, সম্মান করেন সমালোচকদের। তবে আজকের দিনে খুব কমই প্রকৃত সমালোচক রয়েছেন। কারণ অধিকাংশ মানুষই কেবল অভিযোগ করেই দায় শেষ করেন।
আগামী ৭ অক্টোবর প্রশাসক হিসাবে ২০ বছর পূর্ণ হবে নরেন্দ্র মোদির। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক জীবনে কোনো দিন সমালোচনা খোলা মনে নিতে পারেননি মোদি। তাই কেশুভাই প্যাটেল বা প্রবীণ তোগাড়িয়ার মতো নেতারা মোদির বিরুদ্ধে সরব হতেই তাদের ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
এমনকি মোদির বিরুদ্ধে মুখ খুলে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন যশবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্ন সিং বা অরুণ শৌরির মতো প্রবীণ নেতারা। মোদির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দলে অপাংক্তেয় করে দেওয়া হয়েছে লালকৃষ্ণ আদভাণী, মুরালী মনোহর জোশীর মতো শীর্ষ নেতাদেরও। সেই মোদি আজ সমালোচনাকে পছন্দ করেন বলায় তাই প্রশ্ন উঠেছে ভারতীয় রাজনীতির নানা মহলে।
নরেন্দ্র মোদির দাবি, সমালোচনা তার ব্যক্তিগত উন্নতিতে সাহায্য করে। তিনি খোলা মনে সমালোচকদের সম্মানও করেন। যদিও তার মতে, আজকের দিনে প্রকৃত সমালোচকদের সংখ্যা অল্প, কারণ অধিকাংশই কেবল অভিযোগ তুলতে ব্যস্ত। যা শুনে বিরোধীদের প্রশ্ন, সমালোচনা যখন শুনতে পছন্দ করেন, তখন বিরোধী ও সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি কেন হন না প্রধানমন্ত্রী।
সামনেই উত্তরপ্রদেশ-সহ ভারতের পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে কৃষি আইনের বিরোধিতায় সরব ভারতের কৃষকদের একাংশ। যা রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে বিজেপিকে। কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে সরকার যে অস্বস্তিতে, শনিবার তা স্পষ্ট হয়ে গেছে মোদির কথায়ও।
আন্দোলনরত কৃষকদের শুরু থেকেই সমর্থন করছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এসপি, বিএসপি-র মতো দলগুলো। তবে বিরোধীদের ওই ভূমিকার সমালোচনা করে মোদি বলেন, ‘যারা কৃষি আইনের বিরোধিতা করছেন, তাদের দেখলেই অসততার ছবিটি স্পষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য। কারণ তারাই এক সময়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তারাও ওই আইনই আনবেন।’
মোদির দাবি, তার সরকার ছোট কৃষকদের আয় বাড়াতে বদ্ধপরিকর। তবে বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, ‘বন্ধু’ ব্যবসায়ীদের একতরফা ভাবে সুবিধা করে দিতেই তাড়াহুড়ো করে কৃষি আইন কার্যকর করা হয়েছে। যার ধাক্কায় দাম বাড়ছে ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে সব কিছুরই। অথচ চাষিরা উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না, বরং আর্থিক সংকটে পড়েছে সাধারণ জনগণ।
বিএসডি/এমএম