নিজস্ব প্রতিবেদক
মিয়ানমারের রাখাইনের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে ‘মানবিক করিডোর’ খোলাকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, আইনজীবী, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা।
তারা বলছেন, রাখাইনে কার্যকর কর্তৃপক্ষ না থাকায় সেখানে করিডোর খোলা হলে তা পুরো অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
আজ (শনিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘মানবিক করিডোর : সমস্যা বা সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এমন বক্তব্য উঠে আসে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “রাখাইন রাজ্যসহ পুরো মিয়ানমারে এখন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা চলছে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণ করছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। রাখাইনে কোনো কার্যকর কর্তৃপক্ষ নেই। এই অবস্থায় মানবিক করিডোর চালু করা বিপজ্জনক হতে পারে। করিডোর কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে এমন স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ইস্যু। এখানে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ না করে সরকার যদি একক সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা হবে গণতন্ত্রের পরিপন্থি। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।”
কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক বলেন, “আরাকান আর্মি একটি চূড়ান্ত বর্বর ও অবিশ্বাসযোগ্য বাহিনী। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যারা করিডোর চাচ্ছেন, তারা আসলে রাখাইন, আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না রেখেই মত দিচ্ছেন।”
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, “এই অঞ্চলে যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলতে পারে। মানবিক করিডোর নিয়ে জাতির সামনে যেটা আসবে, তা যেন সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে হয়।”
সভাটি সঞ্চালনা করেন গণশক্তি সভার সভাপতি সাংবাদিক সাদেক রহমান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন— বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন, মেজর (অব.) রেজাউল হান্নান শাহীন, নাগরিক নারী ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার, অ্যাডভোকেট শেখ ওমর, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ড. মো. হুমায়ুন কবির, লেখক ও গবেষক ইমরান চৌধুরী, নতুন ধারা জনতার পার্টির চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ নূর, অধ্যাপক মেহেদী হাসান, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, ভাসানী ম্যাপের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ ভাসানী, বিশিষ্ট গবেষক আলাউদ্দিন কামরুল এবং মানবাধিকার কর্মী রুহুল আমিন।