নিজস্ব প্রতিবেদক,
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জনগণের মাঝে সচেতনতার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সব সংবাদ তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। তবে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভিড়, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানতে পারছেন তা নিয়ে রয়েই যাচ্ছে প্রশ্ন। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলায় কর্মরত অনেক সংবাদকর্মী স্বাস্থ্য সুরক্ষা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পরায় গত বছর দৈনিক পত্রিকা থেকে বেশকিছু অনলাইনের সংবাদকর্মী বাসায় বসে কাজ করার সুবিধা পেলেও চলতি বছরে করোনার ঊর্ধ্বগতিতে সেই সুবিধা পায়নি। তবে মহামারি সংকটে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা যেমন জরুরি, তেমনি সত্যনিষ্ঠ তথ্যসেবাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সত্যনিষ্ঠ তথ্যসেবা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা গেছে এর আগেও। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
রোববার (১ আগস্ট) মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ক্লাস উদ্বোধনী করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এসময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রীর অনুষ্ঠান শেষেও করোনা যুগের আগের সেই পুরনো চিত্র ফিরে আসে। যেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ধরেন একাধিক গণমাধ্যমকর্মী, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বিসিপিএস মিলনায়তনে চলছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানস্থলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সবাইকে দেখা যায়। মন্ত্রী তার বক্তব্য শেষে ডায়াস থেকে নেমে যাবার আগে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলেন। কিন্তু নেমে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে যেতে থাকে সে স্বাস্থ্যবিধি। মিলনায়তনের সামনে একপাশে খাবার দেয়া হয়। যেখানে হুড়মুড় করে গণমাধ্যমকর্মীসহ উপস্থিত মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভিড় করেন। যেখানে সেই তিন ফুট দূরত্ব মানতে কাউকে দেখা যায়নি।
করোনা বিশ্বের কোনো পেশার মানুষকে ছাড় দেয়নি। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা ছাড় পাবেন তেমনটি নয়। ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ৫৯ জন সাংবাদিক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনায় সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
করোনা মহামারির এই ভয়াবহ সময়ে বিস্ময়করভাবে বাজে উদাহরণ তৈরি হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীকে ঘিরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন করা। একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকরা সেখানে যেভাবে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ধরেন, সেটা বিস্ময়ের উদ্রেক তৈরি করে। শুধু আজকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ঘিরে নয়, করোনার এই সময়ে সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সংগ্রহে ভিড় কমানো ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায় না।
করোনা মহামারিতেও গণমাধ্যমকর্মীদের এই উদাসীনতার বিষয়ে জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিকরা বলছেন, জরুরি পরিস্থিতিতে কি করতে হবে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের শিক্ষা নেই। এছাড়া সেই নৈতিক অবস্থানও নেই। নেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। তবে সেই সঙ্গে যারা এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এখানে তাদেরও দায়িত্ব অনেক বেশি।
জরুরি পরিস্থিতিতে স্পট নিউজ কিভাবে কাভার করতে হবে সেটা অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে মন্তব্য করে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, একইসঙ্গে যারা আয়োজন করে তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। প্রেস হ্যান্ডেল করার কিছু নিয়ম আছে। ফটো জার্নালিস্টদের ছবি তোলার আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে, ব্রিফিংয়ের জায়গা সুনির্দিষ্ট থাকতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্য তারাই রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা করবেন।
তিনি আরও বলেন, ইভেন্ট ভিত্তিক নিউজ সবাই একযোগে কাভার না করে ভাগাভাগি করে নেয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কোথায় কতটুকু কীভাবে কাভার করা যাবে সে বিষয়ে যার যার অফিসে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।
ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, বহুবার বলার পরও উদ্যোগ নেয়া হয় না। মঞ্চে কে বক্তৃতা করছেন, সেটা দেখা যাবে না। এটার জন্য যে শিক্ষা দরকার সেটা নেই। কাজটা দিয়ে দিই কিন্তু সেটা কীভাবে আদায় করতে হবে শেখায় না। সিনিয়র যারা আছেন তারাও শেখান না যে, ইভেন্ট কাভার করতে গিয়ে কিরকম আচরণ করতে হবে।
বিএসডি/আইপি