নিজস্ব প্রতিবেদক,
ফুসফুসে সংক্রমণ ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন ধীরে ধীরে কমতে থাকা করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘রেমডেসেভির ইনজেকশন’ নিয়ে চট্টগ্রামে চলছে বাণিজ্য। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক দাম নির্ধারণ করে না দেওয়ায় নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন ফরহাদ মিলন বলেন, ফেনীতে করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য অ্যাডভান্স ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ‘রেমকর’ নামের একটি ইনজেকশন কিনতে হয়েছে ৩ হাজার ৪শ টাকায়। মোট ৭টি ইনজেকশন কিনেছি। এমন ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম আগে শুনিনি।
সাজেদুল করিম নামের এক অভিভাবক দাবি করেন, নগরের হাজারি লেইনসহ বিভিন্ন ফার্মেসীতে রেমডেসেভির ইনজেকশন ১২শ-১৪শ টাকায় কেনা যায়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে দাম নেওয়া হচ্ছে ৩৪শ-৩৫শ টাকা বা তারও বেশি।
জানা যায়, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ হিসেবে দেশে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে রেমডেসেভির উৎপাদনের অনুমোদন পায় ৮টি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। এগুলো হলো- স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, অপসোনিন, পপুলার, বিকন ও হেলথকেয়ার।
প্রথমে প্রতি ১০০ মিলিগ্রামের এক ডোজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ৫০০ টাকা। পরে দাম কমিয়ে রাখা হয় ৪ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির ইনজেকশন বাজারে চলে আসায় দাম হয়ে গেছে অর্ধেকেরও কম।
কয়েকটি হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভালো মানের কোম্পানিগুলো পাইকারিতে ১৮শ-২ হাজার টাকায় রেমডেসিভির বিক্রি করছে। যদিও ইনজেকশনের প্যাকেটে কোম্পানির বিক্রয় মূল্য লিখে রাখা রয়েছে ৩ হাজার বা ৪ হাজার ৫০০ টাকা। খুচরা হিসেবে ক্রেতার কাছে অনেকে ওই দামেই ইনজেকশনটি বিক্রি করছেন। হাসপাতালে এই দামের সঙ্গে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট যোগ করা হচ্ছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সব রোগীর ক্ষেত্রে রেমডেসেভির প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। এই ইনজেকশন তাদেরই দেওয়া হয়- যাদের অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন কমতে থাকে। সাধারণত ৫ থেকে ৭টি ইনজেকশন দিতে হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে রেমডেসেভির ইনজেকশন ১০দিনও দিতে হতে পারে।
তাদের মতে, রোগীকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে রেমেডেসেভির ইনজেকশনের তেমন কোনও ভূমিকা নেই। যেসব রোগীর ফুসফুসে কিছুটা সংক্রমণ থাকে এবং যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ধীরে ধীরে কমতে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে রেমডেসেভির প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন ব্যাপকভাবে কমে গেলে রেমডেসেভির দিয়ে লাভ হয় না।
জানা গেছে, একমি’র ‘রেমিকভ’ নামে ১০০ মিলিগ্রামের এক ডোজের দাম ৩৫শ টাকা, বেক্সিমকো’র ‘বেমসিভির’ ৩৫শ টাকা, ইনসেপ্টার ‘নিনাভির’ ৪৫শ টাকা, বিকনের ‘পেনডোভির’ ৪৫শ টাকা, পপুলার এর ‘রেমডেভির’ ৪৫শ টাকা, হেলথকেয়ার এর ‘রেমডেভির’ ৫ হাজার ৫শ টাকা, জেনারেল এর ‘রেমডিগেন’ ৩৫শ টাকা, স্কয়ারের ‘রেমডেনিল’ ৪ হাজার ৫শ টাকা, এসকেএফ এর ‘রেমিভির’ ইনজেকশন এর প্যাকেটে ৪ হাজার ৫শ টাকা খুচরা মূল্য লিখে বিক্রি করা হচ্ছে।
চমেক হাসপাতাল এলাকার কয়েকজন ফার্মেসি মালিক জানান, একেক কোম্পানির ইনজেকশনের একেক রকম দাম। করোনার রোগীর জন্য রেমডেসেভির বেশি বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত প্যাকেটের গায়ে লেখা দামেই ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়। যদিও পাইকারিতে আরও কম দামেই ইনজেকশনটি কেনা যায়।
বিএসডি/আইপি