নিজস্ব প্রতিবেদক:
৭৮.৭৯% প্রিটার্ম ডেলিভারি
১৫.১৫% গর্ভাবস্থায় মৃত্যু
৪.৪% অ্যাকটোপিক প্রেগনেন্সি
করোনা আক্রান্ত ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ গর্ভবতী নারী প্রসবের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অপরিণত শিশুর জন্ম দিয়েছেন। ৮৩ শতাংশেরই প্রসব করতে হয়েছে সিজারের মাধ্যমে। এছাড়া করোনা পজিটিভ মায়েদের ১ দশমিক ২ ভাগ শিশুকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিউ) রাখতে হয়েছে।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই বিষয়ে এটিই বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় জরিপ। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়।
এ সময় করোনা নেগেটিভ গর্ভবতীর চেয়ে পজিটিভ গর্ভবতীর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে ৮.৬৩ গুণ বেশি, পেরিনাটাল অ্যাডভার্স ছিল ২৮ গুণ বেশি। আর করোনা আক্রান্ত গর্ভবতীদের মধ্যে প্রসবের পর ৬২.৮ ভাগ নারীর জটিলতা দেখা গেছে।
★ নেগেটিভের চেয়ে পজিটিভ গর্ভবতীর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে ৮.৬৩ গুণ বেশি
★ নেগেটিভ মায়ের চেয়ে পজিটিভ গর্ভবতীর পেরিনাটাল অ্যাডভার্স ২৮ গুণ বেশি
★ পজিটিভ মায়েদের ৬২.৮ ভাগ পরবর্তীতে জটিলতা
★ পজিটিভ মায়েদের বাচ্চা ১.২ ভাগ এনআইসিউতে ছিল।
আজ মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর নিপসম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত দেশে গর্ভবতী নারী এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রতিক্রিয়া শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা পজিটিভ ৫৪ শতাংশ গর্ভবতীর স্বাভাবিক প্রসব হলেও ৪৬ শতাংশের মাতৃত্বজনিত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। প্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম ছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অপরিণত শিশু প্রসব। ৩৭ সপ্তাহের আগে অর্থাৎ, সময়ের আগেই সন্তান প্রসব হয়েছে ৭৮.৭৯ শতাংশ গর্ভবতীর। এছাড়া মায়ের গর্ভে সন্তানের মৃত্যু হয়েছে ১৫.১৫ শতাংশ। নন-কোভিড গর্ভবতীদের তুলনায় গর্ভবতীকালীন সময়ে কোভিড আক্রান্তদের ১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি ঝুঁকি ছিল।
বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, ৮৯০ জনের উপর এই জরিপ পরিচালিত হয়। এরমধ্যে কোভিড নেগেটিভ ছিল ৬৭৫ জন, পজিটিভ ছিল ২১৫ জন। কোভিড আক্রান্ত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ গর্ভবতীর মৃত্যু হয়েছে। জরিপের ফলাফলে সাধারণ গর্ভবতীদের তুলনায় কোভিড পজিটিভ গর্ভবতীদের প্রসবজনিত জটিলতা ১.৫ গুণ বেশি দেখা গেছে। গত জানুয়ারি-জুন সময়ে নন-কোভিড গর্ভবতীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের সিজার করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড পজিটিভ গর্ভবতীদের মধ্য ৯১.২ শতাংশের করোনার লক্ষণ ছিল। বাকি ৮.৪ শতাংশের কোনো লক্ষণ ছিল না। আক্রান্তদের মধ্যে ৭৭.৬ শতাংশের জ্বরের লক্ষণ ছিল, ৪৩. ৯ শতাংশের কাশি, ৩৯.৮ শতাংশের শ্বাসকষ্ট, ৩৭.২ শতাংশ কোনো স্বাদ পেত না এবং ৩২.৭ শতাংশ গন্ধ পেত না, ২৬.৫ শতাংশের মাথাব্যথার লক্ষণ ছিল।
ঢাকার চারটি সরকারি হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতীদের অতীত রেকর্ড এবং ফোনে কথা বলে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়াদের গড় বয়স ২৬.৩ বছর। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশের বয়স ২৪ থেকে ৩৫ এর মধ্যে।
নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি ও প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রওশন আরা। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লাইন ডাইরেক্টর ডা. মুনশী মো. ছাদুল্লাহ।
বিএসডি/এসএফ