সাদিয়া সাবাহ্
শিশুশ্রম একটি জাতির জন্য অভিশাপ। শিশুশ্রম প্রতিরোধ ছাড়া কি একটি দেশ ও জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছুতে পারে? না,কখনোই সম্ভব না।একটা সময় মনে করা হতো দারিদ্রতার ফসল শিশুশ্রম। কিন্তু এখন লক্ষ্য করলে আমরা বুঝতে পারি,শুধুমাত্র দারিদ্রতার কারণে শিশুশ্রম বৃদ্ধি পায় না।এর পেছনে আরো অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান রয়েছে।যেমনঃ সম্পদের অসম বন্টন, পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্হা এবং আমাদের সদিচ্ছার অভাবে শিশুশ্রম কখনোই নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।তবে দারিদ্রতা শিশুশ্রমের প্রধান কারণ।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকল ব্যক্তিকে শিশু ধরা হয়।চৌদ্দ বছরের কোন শিশুকে তার পরিবারের লিখিত অনুমতি ছাড়া উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ করাকে শিশুশ্রম বলে।
শিশুদের অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে আইএলও ২০০২ সাল থেকে ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করে থাকে।বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে এ দিবস পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু এতো পদক্ষেপের পরও শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
এরপর বিশ্বব্যাপী কোভিড ১৯ এর আবির্ভাব।করোনাকালীন সময়ে অন্যান্য সমস্যার মতো শিশুশ্রম ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এর প্রভাব থাকবে ভয়াবহ।কারণ, পিতা- মাতারা এসময়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিবে কোনমতো বেঁচে থাকাটা।সামাজিক প্রেক্ষাপটও শিশুদের ঠেলে দিবে শিশুশ্রমের দিকে।আমরা জানি,জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ -২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনো না কোনো শ্রমে নিয়োজিত।এ মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই নিয়োজিত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
করোনা কালে ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।আর এই বন্ধের অনেকখানি প্রভাব পড়বে শিশুশ্রম বৃদ্ধিতে।এসময়ে অনেকের পরিবারের আয় উপার্জন হ্রাস পেয়েছে।শিশুরা বিদ্যালয় থেকে ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে এবং তারা নানা কাজে জড়িয়ে পড়েছে,যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।
শুধুমাত্র দিবস পালন কিংবা আইন প্রয়োগ এই শিশুশ্রম প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে, আশা করা বোকামি।এই মুহূর্তে যদি আইন প্রয়োগে শক্ত ভূমিকা পালন করা হয়,তাহলে বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নিবে।আমাদের উচিত হবে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করা এবং শিশুশ্রম রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।সামাজিক সচেতনতা পাশাপাশি নানারকম আর্থিক সাহায্যও প্রদান করতে হবে।এককথায় শিশুর অধিকার সুরক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজকের শিশু আগামীর দিনের ভবিষ্যৎ।তাদের বর্তমান সুন্দর করতে পারলে তারা আমাদেরকে একটি সুন্দর জাতি উপহার দিতে পারবে।যথাযথ পদক্ষেপ ও সরকারের সুদৃষ্টি আমাদেরকে শিশুশ্রমের মতো মহামারী কাটিয়ে উঠতে সহয়তা করবে।
লেখক- শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়