আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনার মোকাবিলায় ভারতীয় করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ নয়, মাত্র ৫০ শতাংশ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে।
ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক সর্বোচ্চ গবেষণা প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এআইএইমস) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিতও হয়েছে সেই গবেষণার প্রতিবেদন।
বুধবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও ভারতের জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছিল- সে সময় দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ২ হাজার ৭১৪ স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্য গবেষণার জন্য সংগ্রহ করেছিলেন এআইআইএমএসের বিজ্ঞানীরা। তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান তারা।
চলতি বছর মার্চ থেকে ভারতে শুরু হয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, অব্যাহত ছিল জুন পর্যন্ত। এই সময়সীমার মধ্যে দেশটিতে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ছুঁয়েছিল ৪ লাখের কোঠা, দৈনিক মৃত্যু পৌঁছেছিল ৪ হাজারে।
যে স্বাস্থ্যকর্মীদের তথ্য গবেষকরা সংগ্রহ করেছেন, তাদের সবাই দেহে করোনার উপসর্গ বোধ করায় ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে’র মধ্যে আরটি-পিসিআর টেস্ট করিয়েছিলেন; এবং সবাইকে দেওয়া হয়েছিল কোভ্যাক্সিনের দুই ডোজ টিকা।
আরটি-পিসিআর টেস্টের পর এই ২ হাজার ৭১৪ স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ১ হাজার ৬১৭ জনই করোনা ‘পজিটিভ’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন, ‘নেগেটিভ’ শনাক্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৯৭ জন।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করার পর ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে এই পরিমাণ কার্যকারিতা থাকে কোভ্যাক্সিনের।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও এআইআইএমএসের সহযোগী অধ্যাপক মনীষ সোনেজা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলার সময় ভারতে মাঠ পর্যায়ে কোভ্যাক্সিন যে ভূমিকা রেখেছে, সে সম্পর্কিত একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র আমরা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।’
তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে কোভ্যাক্সিন কতখানি কার্যকর, সে বিষয়ক কোনো তথ্যের উল্লেখ এআইএমএমএসের গবেষণা প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।
করোনা টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভারতীয় সংস্করণ কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতাও পরখ করেছে এআইআইএমএস। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- করোনা প্রতিরোধে কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ।
২০২০ সালের শেষের দিকে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদের ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন বাজারে আনে। এখন পর্যন্ত এটি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত একমাত্র করোনা টিকা।
এই টিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে মৃত ও বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করোনাভাইরাস দিয়ে। করোনাভাইরাসের যে নমুনাটি এই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে- ভারত বায়োটেককে তা সরবরাহ করেছে দেশটির জীবাণুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।
কোভ্যক্সিন দুই ডোজের করোনা টিকা। এটি সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। গত ৩ জুলাই কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশ করে ভারত বায়োটেক। সেখানে কোম্পানিটি দাবি করেছিল, করোনা প্রতিরোধে প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর তাদের টিকা।
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা টিকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ড, যেটি প্রস্তুত করেছে ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ভারতের টিকাদান কর্মসূচিতে কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড- দু’টি টিকাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্রাজিলসহ আরও কয়েকটি দেশেও অনুমোদন পেয়েছে কোভ্যাক্সিন।
গত ৩ নভেম্বর জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ছাড়পত্র পেয়েছে এই টিকা।
এই নিয়ে ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত করোনা টিকার সংখ্যা পৌঁছেছে ৭টিতে।এগুলো হলো- ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা (সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত), অ্যস্ট্রাজেনেকা (ইউরোপে উৎপাদিত), জনসন অ্যান্ড জনসন বা জ্যানসেন, মডার্না, সিনোফার্ম ও কোভ্যাক্সিন।
বিএসডি/এসএসএ