নিজস্ব প্রতিবেদক:
কলঙ্কিত জেলহত্যা দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম চার জাতীয় নেতাকে। তাঁরা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি আজ পালন করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও দেশ গঠনে জাতীয় চার নেতার অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দি থাকায় তাঁর অবর্তমানে জাতীয় চার নেতা মুজিবনগর সরকারের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, রণনীতি ও রণকৌশল প্রণয়ন, কূটনৈতিক তত্পরতা, শরণার্থীদের তদারকিসহ মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে পরিণত করতে অসামান্য অবদান রাখেন। জাতি তাঁদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি এখনো নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই অপশক্তির যেকোনো অপতত্পরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ হত্যার ধারাবাহিকতা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতার জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। ’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী সেনা সদস্যরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরই গ্রেপ্তার হন জাতীয় চার নেতা। তাঁরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটান সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফ। এ অভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে জেলখানায় গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ সূর্যোদয়ের ক্ষণে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের কালরাতে নিহত ও ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহীতে জাতীয় নেতা এইচ এম কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও মোনাজাত। বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দলের সব সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন শাখা এবং সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণকে যথাযথ মর্যাদা ও শোকাবহ পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলহত্যা দিবস পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএসডি/এফএ