জেলা প্রতিনিধি, পাবনা:
পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট-আরিচা নৌ রুটে মাত্র চারটি ছোট ফেরি চলাচল করে। এর মধ্যে একটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আর একটি ফেরি দিয়ে মাঝেমধ্যে দু-একটা মাইক্রোবাস পারাপার করা হয়। মাত্র দুটি ফেরিতে ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে। এতে ঘাটে আটকে আছে শত শত ট্রাক। দুই পাড়ে পাঁচ শতাধিক ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর ) বিকেলে কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে ফেরিঘাটে যানজট লেগে আছে। দুই দিন যাবত আরও বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র চারটি ছোট ছোট ফেরি দিয়ে এই রুট চালু থাকলেও গত দুই দিন আগে ফেরি কপোতিতে যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দিয়েছে। তারপরও আজ ভোরে সেনাবাহিনীর জাহাজ ঘাটে আসলে আমাদের পন্টুন সরিয়ে তাদের পন্টুন স্থাপন করা হয়। ফরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। শুরুতে চারটি ফেরি দেওয়া হলেও এখন শুধু নামেমাত্র তিনটি ফেরি চলে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচটি ফেরি দিয়ে কিছু দিন পর সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে শাহ মখদুম ও ক্যামেলিয়া ফেরি দিয়ে ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে। ফেরি ফরিদপুর দিয়ে শুধু মাইক্রোবাস পারাপার করা হয়। সব মিলিয়ে আমরা চরম বিব্রতকর অবস্থায় আছি।
যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসার পথে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে ট্রাকসহ অনেক যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু এড়িয়ে কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে ফেরিতে ঢাকায় যাওয়া-আসা করছে। এতে নৌপথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অথচ গত ৭ দিনের বেশির ভাগ সময়ে এই নৌপথে দুটি ফেরি চলাচল করেছে। এখানে নামেমাত্র তিনটি ফেরি চলে। সবকটি পুরোনো ও ত্রুটিপূর্ণ ফেরি। প্রায়ই ফেরিগুলো বিকল হয়ে পড়ছে। এতে ঘাটে কয়েক কিলোমিটার ট্রাকের জটলা সৃষ্টি হচ্ছে।
যানবাহন চালকরা বলেন, এই নৌপথে কমপক্ষে ৮টি ফেরির প্রয়োজন। সম্প্রতি ৫টি ফেরি দিয়েছিল ঘাট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কয়েকদিন পরেই সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে বেগম রোকেয়া ও বেগম সুফিয়া কামাল নামক বড় দুটি ফেরি এখান থেকে নিয়ে যাওয়ায় বেশি বিড়ম্বনায় পড়ছে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাজিরহাট ট্রাক টার্মিনাল থেকে শুরু করে কাশিনাথপুর-কাজিরহাট সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটারজুড়ে তিন শতাধিক ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে আরিচা ঘাটে ১ কিলোমিটার যানজটসহ প্রায় দুই শত ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। দুই ঘাট মিলে ৫ শতাধিক ট্রাক আটকা রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী ছোট গাড়িগুলোকে ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, কোনো কোনো পণ্যবাহী ট্রাককে আরিচায় যাওয়ার জন্য দুই থেকে তিনদিন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার কেউ ৫ দিন ধরে অপেক্ষা করছেন।
ঘাটে আটকে থাকা পাবনা শহর থেকে আগত ট্রাকচালক রাজিব হায়দার অভিযোগ করেন, ৬ দিনের বেশি সময় ধরে তারা পণ্য নিয়ে এই ফেরিঘাটে আটকা। যানজটের কারণে অনেক যানবাহনই এখন বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিবর্তে এই ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা যাওয়া-আসা করায় যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। অথচ মাত্র তিনটি ‘লক্কড়ঝক্কড়’ মার্কা ফেরিতে যানবাহন পারাপার চলছে।
মেহেরপুর থেকে আসা ট্রাকচালক আব্দুর রহিম বলেন, প্রতিমাসে অন্তত ৪টি ট্রিপ নিয়ে ঢাকায় পণ্য নিয়ে যাই। এই ঘাট দিয়ে আসলেই যানজটের কবলে পড়তে হয়। সপ্তাহের পর সপ্তাহ এখানে গাড়ির সারি থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
বিআইডব্লিউটিসির কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, মাত্র তিনটি লক্কড়ঝক্কড় ফেরি দিয়ে এই নৌপথ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। যেভাবে কাজিরহাট ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, তাতে প্রতিদিন ফেরিগুলোর ৩৫ থেকে ৪০টি ট্রিপের প্রয়োজন। অথচ তিনটি ফেরি দিয়ে ১০ থেকে ১২টি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘাটে কোনো ট্রাক এলে সেটিকে ফেরিতে ওঠার জন্য কমপক্ষে দুই দিন থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বিএসডি/এসএফ