আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার সন্দেহভাজন মূলহোতা খালিদ শেখ মোহাম্মদকে গত সপ্তাহে আরও চার সহযোগীর সঙ্গে কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারের একটি সামরিক আদালত কক্ষে হাজির করা হয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ৯/১১ হামলার সন্দেহভাজন এই মূলহোতা ও আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে আদালতে তোলা হয়।
আদালতে যখন ৫৭ বছর বয়সী মোহাম্মদকে হাজির করা হয় তখন তার সহযোগীদের নিয়ে হাসতে দেখা যায় তাকে। মুখে কমলা রঙের দাড়িতে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গিও করেন তিনি। দেড় বছরের বেশি সময় পর শুরু হওয়ার এই শুনানির পর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ-সুরক্ষাবেষ্টিত গুয়ানতানামো বে কারাগারে আইসোলেশনে রাখা হয় তাদের।
২০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৯/১১ হামলা মামলার বিচারপূর্ব শুনানিই এখনও শেষ হয়নি। পাঁচ আসামি মুস্তফা আহমেদ আল-হাওসাবি, রামজি বিন আল-শিব, ওয়ালিদ বিন আতাশ, এবং আবদ-আল-আজিজ আলী এবং খালিদ শেখ মোহাম্মদ গুয়ানতানামো বে কারাগারের সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু ২০ বছর পরও এই মামলার বিচার এখনও শুরুর প্রক্রিয়াতেই আটকে আছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে বিমান ছিনতাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি স্থানে পৃথক হামলা চালিয়ে ২ হাজার ৯৭৬ জনকে হত্যার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আছে। গুয়ানতানামো বের নতুন একজন সামরিক বিচারককে এই মামলার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই মামলা ২০২২ সালে শুরু হতে পারে বলে আগে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। কিন্তু সামরিক কমিশনের আইনের ভিত্তিতে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় এখন আরও বিলম্বের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মোহাম্মদের আইনজীবীরা সামরিক কমিশনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রস্তাব দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা মোহাম্মদ ও তার সহযোগীদের সিআইএ যে নির্যাতন করেছে সেবিষয়গুলোও প্রকাশ্যে আনার পরিকল্পনা করছেন; যে কারণে এই মামলার কার্যক্রম আরও পিছিয়ে যেতে পারে বলে সিআইএর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মামলার বিচারক যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ম্যাথিউ ম্যাককল চলতি সপ্তাহে গুয়ানতানামোর আইনজীবীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, পরবর্তী তিন বছরে অবসর নেওয়ার সময়ে চলে এলেও তিনি বিচারকের বেঞ্চ ত্যাগ করার কোন পরিকল্পনা এই মুহূর্তে করছেন না।
তিনি বলেন, আমার সময়কালেই এই মামলার বিচার শেষ করার কোনও তাড়াহুড়োর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না। আমি এখানেই থাকছি। ম্যাককল চতুর্থ বিচারক হিসেবে ৯/১১ হামলার মামলার বিচারে নিযুক্ত হয়েছেন এবং এখনও এই মামলার বিচার শুরুর গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার আগে আরও তিনজন বিচারপতি এই মামলায় নিযুক্ত হয়েছিলেন।
মানবাধিকার আইনজীবীরা বলেছেন, ‘বিচারে আইনি বাধা দিয়ে এত বেশি যে তারা কখনোই এই মামলার বিষয়ে সন্তোষজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে না।’
৯/১১ হামলার সন্দেহভাজন মূলহোতা খালিদ শেখ মোহাম্মদকে ২০০৩ সালে গোপন অভিযান চালিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তান থেকে গ্রেফতারের পর আফগানিস্তান এবং পোল্যান্ডে সিআইএর ‘ব্ল্যাক সাইটস’ নামে পরিচিত বন্দি নির্যাতন চালানোর কিছু স্থানে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে ‘১৮৩ বার পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন এবং যৌন নিপীড়ন’ করা হয় বলে খালিদের আইনজীবীরা দাবি করেন।
কিউবার গুয়ানতানামো বের সুরক্ষিত সামরিক আদালতে ৯ বছর ধরে ওই মামলার কার্যক্রম চলছে। করোনা মহামারির কারণে দেড় বছরের বেশি সময় পর গত সপ্তাতে ফের শুনানির কার্যক্রম ফের শুরু হলেও কবে এই মামলার কার্যক্রম শেষ হবে সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।
সূত্র: আলজাজিরা, সিএনএন।